এই আয়াতটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সহিত জড়িত। একদা যখন হযরত রসূলে আকরাম (সাঃ) মক্কার কুরায়শ প্রধানদের সাথে ঈমান সম্বন্ধীয় কিছু বিষয়াদি গুরুত্বের সহিত আলোচনায় রত ছিলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম সেখানে উপস্থিত হইলেন। কুরায়শ প্রধানগণের চিন্তাধারা ইবনে উম্মে মাকতুমকে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত করিয়াছিল যে, তাহারা কট্টর কাফেরদের নেতা। তিনি ভাবিলেন, মহানবী (সাঃ) তাঁহাদের উপর অনর্থক নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করিতেছেন। এই ভাবিয়া, নবী করীম (সাঃ)-এর সময়কে সঠিক কাজে লাগাইবার উদ্দেশ্যে, তাহার (সাঃ) মনোযোগ তিনি অন্য কয়েকটি ধর্মীয় বিষয়ের দিকে আকর্ষণ করিয়া প্রশ্ন উত্থাপন করিলেন এইভাবে অসময়োচিত প্রশ্ন উত্থাপনে অবশ্য মহানবী (সাঃ) বিরক্তি বোধ করিলেন এবং হযরত আব্দুল্লাহর প্রতি মনোযোগ দিলেন না (তাবারী এবং বয়ান)। কুরায়শ নেতৃবৃন্দের সহিত আলোচনা অব্যাহত রাখার দ্বারা তাহাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের প্রতি মহানবী (সাঃ)-এর হৃদয়ের ব্যাকুলতা যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি অন্ধ ব্যক্তি আব্দুল্লাহকে চলতি কথাবার্তার মধ্যে হঠাৎ অনাহূতভাবে যোগদানের জন্য ভর্ৎসনা না করিয়া তাহার দিক হইতে অদেখাভাবে (অন্ধ ব্যক্তি তো রসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মুখ ফেরানো দেখেই নাই) কেবলমাত্র মুখ ফেরানো দ্বারা গরীব অন্ধব্যক্তিটির অনুভূতির প্রতি তাঁহার অকৃত্রিম সম্মান বোধ প্রকাশ পায়। কেননা, অনাহূতভাবে এক কথার মাঝখানে অন্য কথা বলিয়া বাধা সৃষ্টির অপরাধ ও অসৌজন্যের জন্য মহানবী (সাঃ) একটি তিরস্কারের শব্দ বা একটি অসন্তুষ্টির কথাও হযরত আব্দুল্লাহকে বলিলেন না। তাহার আত্ম-সম্মান ও হৃদয়াবেগকে আহত করিতে পারে, এমন কিছুই তিনি করিলেন না। অতএব, এই আয়াতটি মহানবী (সাঃ)-এর অনতিক্রম্য ও অত্যুচ্চ নৈতিক অবস্থানের উপর আলোক সম্পাৎ করিয়াছে। কোন কোন তফসীরকারক ভুল বশতঃ মনে করিয়াছেন যে, এই আয়াতটি রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি আল্লাহ্তা’লার ভর্ৎসনা স্বরূপ। কিন্তু ইহা আসলে ভর্ৎসনা তো নয়ই বরং প্রশংসা বিশেষ। আল্লাহ্তা’লা এই আয়াত দ্বারা মহানবী (সাঃ)-এর এই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাঁহার অনুসারীগণকে গরীব-দুঃখী ও সহায়-সম্বলহীন লোকদের কোমল অনুভূতিসমূহের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা প্রদান করিয়াছেন।