যিহিষ্কেল স্বভাবতঃই এই বীভৎস দৃশ্যাবলী দেখিয়া মর্মাহত হইলেন। তিনি কাতর হৃদয়ে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করিলেন- হে প্রভু, এই নগরী না জানি কতদিনে জীবন ফিরিয়া পাইবে, ধ্বংসের পরেও আবার কখন ইহাতে প্রাণের স্পন্দন জাগিবে। তাহার প্রাণের দরদভরা দোয়া আল্লাহ্ শ্রবণ করিলেন। তাহাকে স্বপ্নে বা কাশ্ফে (দিব্যদৃষ্টিতে) দেখানো হইল, তাহার প্রার্থিত নগরীর পুনর্জীবন লাভ একশত বৎসরের মাথায় সম্পন্ন হইবে। আয়াতটিতে একথা বুঝায় না যে, যিহিষ্কেল একশত বৎসর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় ছিলেন এবং তৎপর জীবিত হইয়া উঠিলেন। কুরআন, কাশ্ফে বা স্বপ্নে দৃষ্ট বস্তু বা বিষয়কে এমনভাবেই উল্লেখ করে, যেন সেই বস্তু, বিষয় বা ঘটনা প্রকৃত পক্ষেই ছিল বা ঘটিয়াছিল, স্বপ্ন বা কাশফের কথা উল্লেখই করা হয় না (১২ঃ৫)। যিহিষ্কেল তাহার কাশফের অর্থ বুঝিয়াছিলেন। ইহার অর্থ এই যে, বনী ইসরাঈল জাতি একশত বৎসর পর্যন্ত অসহায়, নির্যাতিত ও অপদস্থ অবস্থায় বন্দী হিসাবে থাকিবে। তারপর তাহারা নব চেতনায় জাগ্রত হইয়া, নূতন জীবন লাভ করিবে এবং তাহাদের পবিত্রভূমি জেরুযালেমে ফিরিয়া আসিবে। যিহিষ্কেলের কাশফ বা স্বপ্ন অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হইয়াছিল। নবুখদ নিৎসর খৃঃপূঃ ৫৯৯ অব্দে জেরুযালেম দখল করিয়াছিল (২য় রাজাবলি-২৪ঃ১০)। যিহিষ্কেল কাশ্ফ দেখেন সম্ভবতঃ খৃঃপূঃ ৫৮৬ অব্দে। আর ইহা পূনঃনির্মিত হয়, ধ্বংসপ্রাপ্তির পূর্ণ এক শতাব্দী পরে। পূনঃনির্মাণের কাজ আরম্ভ হয় খৃঃপূঃ ৫৩৭ অব্দে মিদিয়ার সম্রাট সাইরাসের অনুমতি ও সাহায্য নিয়া পুনঃনির্মানের কাজ সমাপ্ত হয় খৃঃপৃঃ ৫১৫ অব্দে। ইসরাঈলীরা পুনর্বাসনের জন্য ব্যাবিলন রাজ্য ত্যাগ করিয়া ক্রমে ক্রমে আসিতে আসিতে আরও ১৫ বৎসর লাগিয়া যায় এবং খৃঃপৃঃ ৫০০ সনে জেরুযালেম নগরীতে আবার প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দেয়। বনী ইসরাঈল জাতি মৃতপ্রায় অবস্থা হইতে পুনরায় এক নব জীবন লাভ করিল। একথা শিশুসুলভ বলিয়া মনে হয় যে, আল্লাহ্তা’লা যিহিষ্কেলের মৃত্যু দিয়া ঠিকই একশত বৎসর পর্যন্ত মৃত রাখিয়া, তৎপর তাঁহাকে পুনর্জীবিত করিয়াছিলেন। এইরূপ করাতো যিহিষ্কেলের প্রার্থনার সাথে সঙ্গতিহীন। যিহিষ্কেল তাঁহাকে বা কোন ব্যক্তিকে, মৃত্যুদানের পর পুনরুত্থানের জন্য প্রার্থনা করেন নাই। তিনি প্রার্থনা করিয়াছিলেন, মৃতনগরী যেন জীবন পায়, বিধ্বস্ত জেরুযালেম যেন পুনরায় উহার অধিবাসীকে ফিরিয়া পায় ও প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরিয়া উঠে।