৩১৮১

বুখারী শরীফ হইতে জানা যায় যে, প্রথমদিকে কুরআনের কোন অংশ অবতীর্ণ হইলে, ভুলিয়া যাইবার আশংকায় নবী করীম (সাঃ) অতিশয় ত্রস্তব্যস্ত অবস্থায় তাহা কণ্ঠস্থ করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিতেন। পর্ববর্তী আয়াতে মহানবী (সাঃ)-কে নির্দেশ দেওয়া হইল, তিনি (সাঃ) যেন এই অভ্যাস পরিত্যাগ করেন এবং পরবর্তী তিনটি আয়াতে তাঁহাকে আশ্বাস দেওয়া হইল যে, আল্লাহ্‌তা’লা স্বয়ং কুরআনের অবতীর্ণ বাণীকে বিশুদ্ধাবস্থায় রক্ষা তো করিবেনই, তদুপরি এইগুলিকে সংগৃহীত করিয়া পবিত্র ও মনোরম গ্রন্থের আকৃতি দান করিবেন (ইন্ট্রডাকশন টু দি হোলি কুরআন দেখুন)। এবং তিনি ইহাও আশ্বাস দিলেন যে, ইহার (কুরআনের) বাণী বিশ্বময় প্রচার ও ব্যাখ্যা করার দায়িত্বও তাহারই (আল্লাহ্‌রই, ১৫ঃ১০)। এই আয়াতগুলির তাৎপর্য এইরূপও হইতে পারে ঃ যেহেতু পূর্ববর্তী আয়াতগুলিতে কাফেরদের হিসাব দানের ও শাস্তি-প্রাপ্তির দিনের কথা বলা হইয়াছে, মহানবী (সাঃ) ব্যগ্রতার সহিত ভাবিতেছিলেন যে তাহাদের ঐ শাস্তির দিন সম্পর্কিত ঐশী-বাণী যেন তাড়াতাড়ি অবতীর্ণ হয় ও পূর্ণ হয়, যাহাতে সত্য তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হইয়া যায়। এই আয়াতগুলিতে মহানবী (সাঃ)-কে বলা হইল, তিনি (সাঃ) যেন এই ব্যাপারে বাগ্র বা উদ্বিগ্ন না হন। কেননা, কখন কিভাবে সংশ্লিষ্ট ঐশী-বাণী আসবে এবং শাস্তির স্বরূপ কি হইবে, কুরআনের বাণীসমূহ কিরূপে সংগৃহীত হইয়া পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করিবে, কি উপায়ে কুরআন বিশ্বময় পঠিত ও প্রচারিত হইবে, এইসবগুলি বিষয়ই আল্লাহ্‌র দায়িত্বে। মূল অনুবাদে দেওয়া অর্থ ছাড়াও আয়াতটির অনুবাদ এইরূপও হইতে পারেঃ “তোমার মুখ দ্বারা কুরআনের বাণী ব্যাখ্যা করা (ছড়ানো) আমারই (আল্লাহ্‌রই) দায়িত্ব” (রুহুল মা’আনী)। এই বাক্যটি নবী করীম (সাঃ)-এর সুন্নতকে মানবের জন্য অপরিহার্য করিয়া দিয়াছে এবং কুরআনের পরেই, সুন্নতের উপর নির্ভরশীলতাকে নিশ্চিত ও নিরাপদ হেদায়াত বলিয়া গণ্য করিয়াছে।