‘যামালাহু’ অর্থ সে তাহাকে পিঠের পিছনে বহন করিল। ‘যাম্মালা’র অন্য অর্থ সে তাড়াতাড়ি দৌড়াইয়া চলিল৷ ‘তাযান্মালা’, ‘ইয্যাস্মালা’, ‘ইয্দামালা’-এই শব্দগুলির অর্থঃ সে নিজেকে চাদরে (কম্বলে) জড়াইল, সে বোঝা বহন করিয়া চলিল। মুয্যাম্মিল (বা মুতাযাম্মেল) অর্থ বস্ত্রাবৃত (কম্বল-জড়ানো) লোক যাহার উপর হাজারো দায়িত্বের বোঝা (আকরাব, কাদীর, মা’আনী)। হেরার পর্বত-গুহায় আল্লাহ্র ফিরিশ্তা তাঁহার কাছে ‘বাণী’ দিয়া আসিলে, মহানবী (সাঃ) এই নূতন আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতায় ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া তাড়াতাড়ি গৃহে ফিরিলেন। এই ভীতি-বিহলতা খুবই স্বাভাবিক ছিল, কেননা অভিজ্ঞতাটা ছিল একেবারেই অভিনব ও অসাধারণ। গৃহে পৌঁছিয়াই তিনি তাঁহাকে বৃহৎ বস্ত্রে আচ্ছাদিত করিয়া দিতে অনুরোধ করিলেন। বস্ত্রাবৃত করণের মধ্যে যেহেতু জোড়া দেওয়া ও একত্রীকরণ অর্থ নিহিত আছে, অতত্রব এই আয়াতের অর্থ এইরূপও হইতে পারে, “ওহে ব্যক্তি, বিশ্বের সকল জাতিকে পরস্পর সংযুক্ত করিয়া এক পতাকার নীচে একত্রিত করিতে তুমি নিয়োগ-প্রাপ্ত হইয়াছে”। হাদীসের মধ্যেও মহানবী (সাঃ)-কে ‘হাশের’ বলা হইয়াছে, ‘হাশের’ অর্থ বিশ্ববাসীকে সংযোজনকারী ও একত্রীভূত কারী (বুখারী)। এই আয়াতের আরও তাৎপর্য আছেঃ- (১) মহানবী (সাঃ) এমনই এক ব্যক্তি যাহাকে মহান উদ্দেশ্য পূর্ণ করিবার জন্য মানব জাতিকে জাগাইয়া তুলিতে হইবে। আর ইহা এক সুদীর্ঘ পথ, যাহা অতিক্রম করিতে সুদীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। অতত্রব তাহাকে দ্রুত পদে চলিতে হইবে– কঠোর পরিশ্রমের সহিত অবিশ্রান্তভাবে দ্রুতগতিতে কাজ করিয়া যাইতে হইবে, (২) তিনি এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তি, যাঁহাকে অসামান্য বোঝা বহন করিতে হইবে– বিশ্ব-মানবের ঘরে ঘরে তাঁহাকে ঐশী-বাণীর গুরুভার বহনের বিরাট দায়িত্ব সম্পাদন করিতে হইবে। মহানবী (সাঃ)-কে স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইতেছে যে, তাঁহাকে আল্লাহ্-ভক্ত এক বিরাট সম্প্রদায় তৈরী করিতে হইবে যাহারা তাঁহারই মহান আদর্শ ও অবিচল প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হইয়া, ইসলামের বাণীকে মানবতার দ্বারে দ্বারে পৌঁছাইয়া দিতে তাঁহাকে (সাঃ) সাহায্য করিবে। এই কষ্টসাধ্য কর্তব্য ও গুরুদায়িত্বের প্রতিই এখানে ইঙ্গিত করা হইয়াছে, লম্বা ও মোটা কাপড়ে তাঁহার আচ্ছাদিত হওয়ার প্রতি নহে।