৩১৩৫

আল্লাহ্‌র নবীগণ দয়া ও করুণায় ভরপুর হইয়া থাকেন। তাহারা করুণা-সিন্ধু। নূহ (আঃ)-এর এই প্রার্থনা হইতে বুঝা যায় যে, তাহার বিরোধিতা ও শত্রুতা দীর্ঘকাল ব্যাপী চলিয়াছিল। অবিরত-অবিশ্রান্তভাবে বহুদিন ধরিয়া তিনি অবহেলিত ও নির্যাতিত হইয়াছিলেন। তিনি তাহাদিগকে সঠিক পথে আনার জন্য যুগ-ব্যাপী অধ্যবসায় সহকারে চেষ্টা চালাইলেন। কিন্তু তাঁহার সকল চেষ্টাই অরণ্যে রোদন হইল। তাঁহার অল্প সংখ্যক অনুসারীদের সাথে আর দু’একজনও যোগদানের সম্ভাবনা যখন থাকিল না। এবং ইহারাও যখন চরম মাত্রার অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হইল, তদুপরি অবিশ্বাসীদের দুষ্কৃতির পরিধি যখন সকল সীমা ছাড়াইয়া গেল, তখন অবস্থা এতই ভয়াবহ রূপ ধারণ করিল যে, নূহ (আঃ)-এর মত দয়ার্দ্র-হৃদয় ব্যক্তিও তাহাদের জন্য বদ-দোয়া করিতে বাধ্য হইলেন। অবশ্য, এইরূপ একই অবস্থায়, নবী করীম (সাঃ) তাহার শত্রুদের প্রতি যে অতুলনীয় মহানুভবতা ও অসামান্য ধৈর্য প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা জাগতিক জীবনে কল্পনাতীত। উহুদের যুদ্ধে, যখন তাহার দুইটি দাঁত ভাঙ্গিয়া গেল এবং জখমে-জখমে শরীর ভরিয়া গেল, আর সারা দেহ-রক্তে রঞ্জিত হইয়া গেল, তখন সেই চরম অবস্থায়ও তাহার মুখ হইতে যে কথাগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তাহা ছিলঃ ”যে জাতি তাহাদের প্রতি সমাগত নবীকে জখম করিয়াছে এবং তাঁহার মুখমণ্ডলকে রক্তাপ্লুত করিয়াছে শুধু এই কারণে যে, তিনি তাহাদিগকে আল্লাহ্‌র দিকে আহ্বান করেন, সেই জাতি কি করিয়া পরিত্রাণ লাভ করিবে! হে আমার প্রভু আমার জাতিকে তুমি ক্ষমা কর, তাহারা কি করিতেছে, তাহা বুঝে না” (যুরকানী এবং হিশাম)।