মূসা (আঃ) নিজের অনুসারীদের তরফ হইতে যে মানসিক কষ্ট ও বিপত্তি সহ্য করিয়াছেন, কোন নবীকেই হয়তঃ এমনটা করিতে হয় নাই। তাঁহার অনুসারীগণ স্বচক্ষে ফেরাউনের সলিল সমাধি দেখিল, আল্লাহ্র মহাশক্তি প্রত্যক্ষ করিল। অথচ নিরাপদে সাগর পাড়ি দিবার পরেই তাহারা আল্লাহ্র কুদরতকে ভুলিয়া গিয়া পৌত্তলিকতার দিকে আকৃষ্ট হইয়া গেল এবং অন্য এক জাতিকে মূর্তি-পূজা করিতে দেখিয়া মূসা (আঃ)-কে বলিল, ‘আমাদের জন্য এরূপ উপাস্য তৈরী করিয়া দাও যেরূপ উপাস্য তাহাদের আছে’ (৭ঃ১৩৯)। যখন মূসা (আঃ) তাহাদিগকে আল্লাহ্র প্রতিশ্রুত-ভূমি কেনান এলাকায় অভিযান চালাইবার জন্য তাহাদিগকে নির্দেশ দিলেন, তখন তাহারা অবহেলা ও তাচ্ছিল্যের সূরে জবাব দিল, ‘তুমি ও তোমার প্রভু যাও এবং তোমরা দুইজনেই যুদ্ধ কর, নিশ্চয় আমরা এখানেই বসিয়া থাকিব’ (৫ঃ২৫)। পৌত্তলিক মনোভাবাপন্ন স্বজাতিকে মূসা (আঃ) মূর্তি-পূজা হইতে পুনরুদ্ধারের জন্য অবিরত চেষ্টা করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু ফেরাউনের দাসত্ব হইতে উদ্ধারকৃত স্বজাতির নিকট হইতে কৃতজ্ঞতা-প্রাপ্তির চাইতে তিনি অবজ্ঞা,অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্য পাইয়াছেন বেশী। তাঁহার সৎ চেষ্টার প্রতি সহযোগিতা দানের পরিবর্তে তাঁহার অনুসারীরা বরং বাধা দান করিয়াছে বেশী। অথচ ফেরাউনের দাসত্ব হইতে মুসা (আঃ) তাহাদিকে মুক্ত না করিলে বনী ইসরাঈলী জাতির জাতি-সত্তাই লোপ পাইত। পৌত্তলিকতার অন্ধকার হইতে তওহীদের আলোর দিকে না আনিলে, সকল পারলৌকিক মঙ্গল হইতেও ঐ জাতি চিরবঞ্চিত থাকিত। এত বড় ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গলকারীর প্রতি অপমান, বিদ্বেষ, বদনাম ও কুখ্যাতি পর্যন্ত তাহারা ছড়াইয়াছে।