মুসলমানগণ চরম অত্যাচারের মাঝে মক্কায় দিন কাটাইতেছিলেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের সহিত মদীনায় যাইয়া মিলিত হওয়াও খুব বিপজ্জনক ছিল। তথাপি, মুসলমানগণ আত্মীয়-পরিজন ও সহায়-সম্বল সব কিছু ফেলিয়া, সকল বিপদাপদের ঝুঁকি মাথায় লইয়া স্রোতের মত দলে দলে মদীনায় আসিতে লাগিলেন। এই সব আশ্রয়-প্রার্থীদের মধ্যে স্ত্রীলোকের সংখ্যা একেবারে কম ছিল না। এই আয়াতটি সেই সব আশ্রয় প্রার্থী স্ত্রীলোকদের সম্বন্ধে দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছে। মহানবী (সাঃ)-এর সতর্কতার এক উজ্জ্বল সাক্ষ্য এই যে, তিনি মক্কা হইতে আগত আশ্রয়প্রার্থিণীদিগকে ভালভাবে পরীক্ষা না করিয়া এবং তাহাদের ইসলাম গ্রহণের আন্তরিকতা সঠিকভাবে যাচাই না করিয়া, তাহাদিগকে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করিতেন না। তাহাদের ইসলাম গ্রহণের পিছনে দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা তাহা অতি সতর্কতার সহিত পুংখানুপুংখরূপে যাচাই করার মাধ্যমে সুনিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তাহাদিগকে মুসলিম সমাজে গ্রহণ করিতেন। এই আয়াত আরও বলিতেছে যে, আশ্রিত মো’মেন মহিলার কাফের স্বামীর সহিত আপনা হইতেই বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটিয়া যায়। এমতাবস্থায় একজন মো’মেন ব্যক্তি দুইটি শর্তে তাহাকে বিবাহ করিতে পারেঃ (১) তাহার অবিশ্বাসী স্বামী তাহার উপর যাহা ব্যয় করিয়াছে, তাহা ঐ ব্যক্তিকে আগেই পরিশোধ করিতে হইবে, (২) রীতিমত মোহরানা ঠিক করিয়া স্ত্রীলোকটিকে দিতে হইবে। অনুরূপভাবে কোন মুসলমানের স্ত্রী যদি ইসলাম ত্যাগ করে তাহা হইলে তাহাদের বৈবাহিক সম্পর্ক নিজে নিজেই বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইবে। ইসলামত্যাগী স্ত্রী যদি কাফের ব্যক্তিকে বিবাহ করিতে চায়, তাহা হইলে উপরোক্ত পন্থাই অনুসরণ করিতে হইবে। এই পারস্পরিক ব্যবস্থা, যাহা এই আয়াতে বর্ণিত হইয়াছে, তাহা ব্যক্তি-পর্যায়ে সম্পাদিত হইতে পারিবে না বরং রাষ্ট্র দ্বারা সম্পাদিত হইতে হইবে, যেরূপ যুদ্ধের সময় হইয়া থাকে। এই আয়াতটি যুদ্ধের সহিত সম্পর্কিত। যুদ্ধের সময় বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে ব্যক্তি-পর্যায়ে সামাজিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকিতে পারে না এবং থাকা উঠিত নয়।