‘ফাই’ ঐ সকল দ্রব্যসামগ্রীকে বলা হইয়া থাকে যাহা বিনা পরিশ্রমে, বিনা যুদ্ধে ও বিনা কষ্টে মুসলমানদের হাতে আসে। সেজন্য, ইহাতে যোদ্ধাগণের কোন অংশ প্রাপ্য থাকে না বরং সবটাই সরকারী খাজাঞ্চী খানায় চলিয়া যায়। খায়বরের ইহুদীদের কাছ হইতে যে দ্রব্যসামগ্রী মুসলমানদের হস্তগত হইয়াছিল, এই আয়াতে উহার প্রতিই বিশেষ ইঙ্গিত রহিয়াছে। ইহা নীতি বাধিয়া দিয়াছে যে, ধন-দৌলত কেবল ধনী ও সম্পদশালীদের মাঝেই হাত-বদল হইবে না। ব্যক্তি বিশেষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য যেমন তাহার শারীরিক প্রয়োজন ও চাহিদাগুলি মিটানো দরকার, তেমনি সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য, সম্পদের বন্টন এবং ধনের অবাধ ও সহজ সরবরাহ বা সাকুলেশন অত্যাবশ্যক। ইহাই ইসলামী অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ইসলাম আসিয়া মানুষকে কায়েমী স্বার্থের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত পাইয়াছিল। তাই ইহা এমন সব ব্যবস্থা প্রবর্তন করিল যাহা অর্থসম্পদ-ভিত্তিক সামাজিক ব্যবধানকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া দিল এবং অন্যায়ভাবে সংরক্ষিত বিশেষ সুবিধা-ভোগকে প্রায় বিলুপ্ত করিয়া দিল। ইসলাম ন্যায্য মুনাফা-ভিত্তিক ব্যবসা কিংবা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করে না। তবে, সম্পদ আহরণের প্রেরণা ও প্রতিযোগিতা, ন্যায় ও দয়া-মায়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইতে হইবে। মুনাফার লোভ মানুষের আছেই, তবে প্রতিযোগিতামূলক অতি মুনাফা আর অতি লোভ সামাজিক আইন দ্বারা সংযত করা ছাড়া উপায় নাই। যাকাত ইসলামের হাতে এমন একটি মৌলিক অস্ত্র যাহা অন্যের প্রয়োজন ও অভাবকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করিয়াছে। সমাজের দারিদ্র বিতাড়নে যাকাত ছাড়াও অন্যান্য ব্যবস্থা ইসলামে রহিয়াছে।