৩০১৬

মদীনাতে তিনটি ইহুদী গোত্র বাস করিত– বনু কাইনুকা, বনু নাযীর ও বনু কুরাইযা। এই আয়াত মদীনা হইতে ‘বনু নাযীর’ গোত্রের নির্বাসনের ঘটনার কথা বলিতেছে। ইহাদের পূর্ববতী ‘বনু কাইনুকা’ গোত্রের মত, ইহারাও বার বার মুসলমানদের সাথে বিশ্বাস-ঘাতকতা করিতেছিল। তাহারা ষড়যন্ত্র করিয়া শত্রুদের সাথে গোপনে হাত মিলাইয়া মুসলিম-বিরোধী মৈত্রী গড়িয়াছিল। তাহারা বার বার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিতেছিল এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এবং তাঁহার শক্রদের মধ্যে নিরপেক্ষ থাকার চুক্তিকে বার বার লঙঘন করিতেছিল। এমনকি মহানবী (সাঃ)-এর জীবন নাশের ষড়যন্ত্র পর্যন্ত তাহারা করিয়াছিল। তাহাদের নেতা কাব বিন আশরাফ মুসলমানগণকে মদীনা হইতে বিতাড়িত করিবার জন্য মক্কায় যাইয়া কুরায়শ ও অন্যান্য পৌত্তলিক গোত্রগুলির সাহায্য চাহিয়াছিল। উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক পরাজয়ের পর, তাহাদের ষড়যন্ত্র ও মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি অবজ্ঞা-প্রদর্শন বহুলাংশে বাড়িয়া গেল। যখন তাহাদের পাপের পাত্র কানায় কানায় ভরিয়া গেল এবং তাহাদের মদীনায় অবস্থান মুসলমানদের জীবনের প্রতি এবং মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি অবিরাম হুমকি হইয়া দাড়াইল তখন তাহাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে নবী করীম (সাঃ) বাধ্য হইলেন। তিনি তাহাদের দুর্গগুলি অবরোধ করিলেন। একুশ দিন ধরিয়া তাহারা দুর্গগুলিকে স্বীয় অধিকারে রাখিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা হইল না। তাহারা আত্মসমর্পণ করিল। তাহাদিগকে মদীনা ছাড়িয়া যাইতে বলা হইল এবং তাহারা সিরীয়ায় চলিয়া গেল। মাত্র দুইটি পরিবার খায়বরে রহিয়া গেল। মহানবী (সাঃ) তাহাদের প্রতি ব্যতিক্রম ধর্মী বিবেচনা ও অসামান্য দয়া প্রদর্শন করিলেন। তিনি তাহাগিকে তাহাদের সব মালামাল ও তৈজস-পত্র তাহাদের সাথে নিয়া যাইতে দিলেন। পূর্ণ নিরাপত্তার ভিতর দিয়া তাহারা মদীনা ত্যাগ করিল, কিন্তু তাহারা তখনও মক্কার মিত্রদের সাহায্যের আশা করিতেছিল এবং মদীনার মোনফেকদের দিকে তাকাইতেছিল। তাহাদের অজেয় দুর্গগুলি তাহাদিগেকে বাঁচাইতে পারিল না। তাহাদের অসৎ উদ্দেশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র, তাহাদের চালাকী ও চক্রান্ত, তাহাদের পৌনঃপুনিক বিশ্বাস-ঘাতকতা ও অবিশ্বস্ততা এবং বার বার প্রতিজ্ঞা-ভঙ্গ ইত্যাদির তুলনায় তাহাদিগকে যে শাস্তি দেওয়া হইয়াছে তাহা খুবই লঘু। “প্রথম নির্বাসনের সময়” কথাগুলি দ্বারা বদরের যুদ্ধের পরে ‘বনু কাইনুকা’ গোত্রের মদীনা হইতে নির্বাসনকেও বুঝাইতে পারে অথবা নবী করীম (সাঃ) কর্তৃক মদীনা হইতে উপরোক্ত তিন গোত্রের বহিষ্কারকেও বুঝাইতে পারে। ইহা তিন গোত্রের ক্ষেত্রেই প্রথম বহিষ্কার ছিল। মহানবী (সাঃ)-এর দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর দ্বিতীয় ও শেষবারের মত আরব ভূখণ্ড হইতে সকল ইহুদীকেই বিতাড়ন করেন। এই দিক দিয়া বিচার করিলে এই কথাগুলির মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন ভবিষ্যদ্বাণী দৃষ্ট হয়। তাহা এই যে, মদীনার ইহুদী গোত্রগুলি প্রথমবার নবী করীম (সাঃ) কর্তৃক নির্বাসিত হইবার পর, আবার দ্বিতীয়বার তাহারা সারা আরব ভূমি হইতে নির্বাসিত হইবে।