২৯৯৯

আয়াতটিতে বলা হইয়াছে যে, ঈসা (আঃ)-এর অনুসারী খৃষ্টানেরা আল্লাহ্‌তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় হিসাবে ‘বৈরাগ্য’ প্রথার আবিস্কার করে, অথচ আল্লাহ্‌তা’লা এরূপ করার নির্দেশ দেন নাই। আয়াতটির অর্থ এইরূপও হইতে পারেঃ খৃষ্টানগণ ‘বৈরাগ্য’ আবিস্কার করে, আল্লাহ্ বৈরাগ্য অবলম্বনের কোন আদেশ দেন নাই– তিনি কেবল তাঁহার সন্তুষ্টি অর্জনেরই আদেশ দিয়াছিলেন। ২৬ আয়াতে আল্লাহ্‌তা’লা কর্তৃক ‘আল্‌ মীযান’ পাঠানোর কথা বলা হইয়াছে, যাহাতে মানুষ চরম ও হঠকারী পন্থা পরিত্যাগ পূর্বক সকল কর্মে ও সকল ব্যাপারেই সুখকর মধ্যপথ অবলম্বন করে। এই আয়াতে খৃষ্টান জাতির উদাহরণ দিয়া বুঝানো হইতেছে যে, যত সদুদ্দেশ্যই হউক না কেন, খৃষ্টানেরা এই চরম পন্থা অবলম্বনের দ্বারা তাহাদের আসল লক্ষ্য খোদার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হইয়াছে। তাহারা এই ভুল-চিন্তা দ্বারা চালিত হইয়া সন্ন্যাস-প্রথা আবিস্কার করিয়াছিল যে, এই পথেই বুঝি তাহারা আল্লাহ্‌তা’লার নৈকট্য ও প্রসাদ লাভে সমর্থ হইবে, তাহারা আরো ভাবিয়াছিল, অবিবাহিত যীশুর শিক্ষা ও আচরণ বুঝি ইহাই। কিন্তু ইহা মস্তবড় সামাজিক অকল্যাণ ডাকিয়া আনিয়াছে। বহু অনর্থের মূলে রহিয়াছে খৃষ্টানদের এই ভ্রান্ত কুপ্রথা। “বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি” বলিয়া তাহারা আরম্ভ করিয়াছিল, আর সুখ-সম্ভোগ ও সম্পদ-উপাসনার মধ্যে আত্মবিলীন হইয়া তাহারা সমাপ্তি ঘোষণা করিতেছে। ইসলাম এই সন্ন্যাস প্রথাকে মোটেই গুরুত্ব দেয় নাই বরং নিন্দা করিয়া ইহাকে জীবন হইতে নির্বাসন দিয়াছে, কেননা ইহা মানব-প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত ও পরিপন্থী। মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, “ইসলামে বৈরাগ্য নাই” (আসীর) ইসলাম সেই সব স্বপ্ন-দর্শীদের ধর্ম নহে যাহারা রূঢ় বাস্তব জগত হইতে নিজেদেরকে দূরে বহুদূরে সরাইয়া নিয়া, নিজ নিজ ধ্যান-ধারণার কল্পনা-জগতে আশ্রয় নেয়। ইসলামে এইরূপ অবাস্তব শিক্ষারও কোন মূল্য নাই যেমন, “কল্যাণের নিমিত্ত ভাবিত হইও না” (মথি ৬ঃ৩৪)। বরং ইসলাম অত্যন্ত জোরের সহিত প্রত্যেক মুসলিমকে তাকিদ দেয় যে, “সে যেন এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ দেয় যে, আগামী কালের জন্য সে কি (আমল) পাঠাইতেছে।” প্রকৃত মুসলিম হইল সেই ব্যক্তি, যিনি সমভাবে ও সম্পূর্ণভাবে, আল্লাহ্‌র প্রতি ও মানুষের প্রতি তাহার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করিয়া থাকেন।