কুরআন গত চৌদ্দশত বৎসর যাবৎ অবিকৃত, সংরক্ষিত ও অবিকল অবস্থায় প্রচলিত রহিয়াছে। কুরআনের অবিকৃতি, সংরক্ষণ ও অপরিবর্তনীয়তা সম্বন্ধে বিরাট চ্যালেঞ্জ কুরআনেই রহিয়াছে। কিন্তু চৌদ্দশত বৎসরে এ বিশ্বের সকল কুরআন-বিদ্বেষী মানুষ মিলিয়া এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করিতে সক্ষম হয় নাই। শত্রুভাবাপন্ন সমালোচকেরা ছিদ্রান্বেষণ প্রচেষ্টার ত্রুটি করে নাই। তাহাদের সকল প্রচেষ্টার একটি মাত্র অনিবার্য ফল—যাহা শত্রুদের কাছে তিক্তই লাগিয়াছে—এই হইয়াছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যে কিতাবখানা চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে বিশ্ববাসীর কাছে দিয়া গিয়াছেন, তাহা জের-জবর (আ’-কার-ই-কার) সহ অবিকল অবস্থায় আমাদের কাছে পৌঁছিয়াছে (মূহর)। কুরআন এই অর্থেও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রহিয়াছে যে, পবিত্রচেতা বিশ্বাসীগণ এখনও ইহা হইতে আধ্যাত্মিক সম্পদ আহরণ করিয়া থাকেন। পরবর্তী আয়াতও এই তাৎপর্য বহন করে। এই আয়াতের অন্য অর্থ ইহাও হইতে পারে যে, যে সব আদর্শ ও নীতি কুরআনে ব্যক্ত করা হইয়াছে, তাহা প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত রহিয়াছে। অর্থাৎ কুরআনের নীতি-মালাগুলি প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুনের সহিত পূর্ণমাত্রায় সামজ্ঞস্যপূর্ণ। প্রাকৃতিক আইন-কানুনের মতই এইগুলিও অপরিবর্তনীয়। এইগুলিকে অবজ্ঞাভরে অমান্য করা যায় না। অথবা, আয়াতটির এই অর্থও করা যাইতে পারে— “মানুষকে যে প্রকৃতি দিয়া আল্লাহ্তা’লা সৃষ্টি করিয়াছেন, সেই প্রকৃতির মধ্যেই কুরআন রক্ষিত আছে” (৩০ঃ৩১)। মানুষের প্রকৃতি মৌলিক সত্যের ভিত্তির উপর স্থাপিত, তাহাকে সত্যে পৌঁছার শক্তিতে ভূষিত করা হইয়াছে। যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সহিত মানব-প্রকৃতিকে কাজে লাগায়, সে সহজেই কুরআনের সত্যতাকে উপলব্ধি করিবে।