আকাশ-মণ্ডলের সৃষ্টিসহ উহাতে চন্দ্র-সূর্যের অবস্থান নির্ধারণ করতঃ পৃথিবীর পরিসর, বিস্তার এবং উহাতে শস্যাদি উৎপাদনের ব্যবস্থা-সম্পাদন ও তদনুরূপ অন্যান্য বিষয়ের উল্লেখ করিবার পর এই আয়াতে মানব-সৃষ্টির কথা বলা হইয়াছে। ‘তিনি মানুষকে খন্ খনে পাত্রের ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন’ বাক্যটির অর্থ এই হইতে পারে যে, মানুষকে এমন বস্তু-উপাদানের সমনুয়ে সৃষ্টি করা হইয়াছে যাহার মধ্যে কথা বলার গুণ ও শক্তি নিহিত রহিয়াছে। ‘সালসাল’ তখনই শব্দ করে, যখন বাহিরের কোন বস্তু দ্বারা ইহাকে আঘাত করা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে ইহার ব্যবহার, এই কথার ইঙ্গিত বহন করে যে, তাহার প্রতিধ্বনি বা প্রত্যুত্তর দানের ক্ষমতা, বাণী গ্রহণের সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল। মানুষের সৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্তর বুঝাইবার জন্য কুরআনে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। প্রথম স্তরটি বুঝাইতে বলা হইয়াছে, “আল্লাহ্তা’লা তাহাকে (মানুষকে) মাটি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন” (৩ঃ৬০)। দ্বিতীয় ধাপটি বুঝাইতে বলা হইয়াছে “তিনিই তোমাদিগকে কাদা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন”(৬ঃ৩) ইহা দ্বারা বুঝায় যে, ঐশী-বাণীরূপ পানির ছিটা পাইয়া মানুষ ভাল-মন্দ বিচার করিবার শক্তি অর্জন করে। মানুষের তৃতীয় স্তরকে বলা হইয়াছে “খন খনে পাত্রের ন্যায়, এই ধাপে মানুষকে দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদির দ্বারা অগ্নি-পরীক্ষা করাইয়া নেওয়া হয়। যখন এই অগ্নিপরীক্ষার সব বিষয়ে সে কৃতকার্যতার সহিত পাশ করে এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হয়, তখন তাহার ভাগ্যে খোদা-মিলন ঘটে।