‘আন্ নাজ্ম’ অর্থ তারকা, কাণ্ডবিহীন গাছ। তবে, নামবাচক বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হইলে, ইহার অর্থ হয় ‘সপ্তর্ষিমণ্ডল’। অনেক তফসীরকারকের মতে কুরআনের খণ্ড খণ্ড অবতরণকে ‘আন্ নাজ্ম’ বলা হইয়াছে। আবার বহু জ্ঞানী আলেমের অভিমত, ‘আন্ নাজ্ম’ দ্বারা হযরত নবী করীম (সাঃ)-কেই বুঝাইয়াছে। এই শব্দের বহু বচন ‘আন্ নুজুম’ দ্বারা জন-নেতাগণকেও বুঝায়, ক্ষুদ্র রাজ্যকে বা ক্ষুদ্র স্বাধীন এলাকাকেও বুঝাইয়া থাকে (কাশ্শাফ, তাজ, গারায়েবুল কুরআন)। এই শব্দের বিভিন্ন অর্থকে নজরে রাখিয়া এই আয়াতের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ হইতে পারেঃ- (১) মহানবী (সাঃ)-এর একটি প্রসিদ্ধ হাদীসের মর্ম হইল, “যখন পৃথিবীর সর্বত্র আধ্যাত্মিক অন্ধকার ছড়াইয়া পড়িবে, ইসলামের একমাত্র নাম ছাড়া কিছুই বাকী থাকিবে না এবং অক্ষরগুলি ছাড়া কুরআনের কিছুই বাকী থাকিবে না, ঈমান আকাশে চলিয়া যাইবে, তখন পারস্য বংশীয় এক ব্যক্তি ইহাকে পৃথিবীতে পুনরায় নামাইয়া আনিবেন” (বুখারীঃ কিতাবুত তফসীর,সূরা আল জুমুআ), (২) কুরআনের ঐশী-বাণী হওয়ার সাক্ষ্য স্বয়ং কুরআনই বহন করিবে। (৩) ইসলামের এই সুকোমল চারাগাছটি প্রবল বিরোধিতার ঝড়-ঝঞ্ঝায় উড়াইয়া লইয়া যাইবে বলিয়া মনে হইলেও অতি সত্বর ইহা বিরাট মহীরূহে পরিণত হইবে, যাহার ছায়াতলে পৃথিবীর জাতিসমূহ আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিবে। (৪) আরব জাতি যেমন বিশাল মরুভূমিতে ভ্রমণকালে আকাশের তারকার সাহায্যে নিজেদের পথ ও দিক ঠিক রাখিয়া গন্তব্যস্থলের দিকে অগ্রসর হয় (১৬ঃ১৭) ঠিক তেমনিভাবে, এই উজ্জ্বল তারকার (মহানবী (সাঃ)-এর) সাহায্যে তাহারা এখন আধ্যাত্মিক গন্তব্য পথে অগ্রসর হইতে থাকিবে। (৫) ইহাতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হইতেছে যে, আরব দেশে বর্তমানে প্রচলিত যে জরাজীর্ণ শাসন-ব্যবস্থা রহিয়াছে তাহা অচিরেই ভাঙ্গিয়া পড়িবে (৫৪ঃ২)।