প্রাকৃতিক জগতের ঘটমান আশ্চর্য দৃশ্যপট বর্ণনা করিয়া এই চারটি আয়াত (২-৫) আমাদের দৃষ্টিকে অনুরূপ সমান্তরাল আধ্যাত্মিক দৃশ্যপটের দিকে আকর্ষণ করিতেছে। এই সাদৃশ্য খুবই চমৎকার ও হৃদয়গ্রাহী। ‘আয যারিয়াত’ (চতুর্দিকে বিস্তারকারীগণ), ‘আল্ হামিলাত’ (বহনকারীগণ), ‘আজ জারিয়াত’ (হাল্কা অবস্থায় দ্রুতগতিতে ধাবমানগণ) ও আল্ মুকাস্সিমাত (বন্টনকারীগণ) এই চারিটি শব্দ যদি পার্থিব প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর প্রতি আরোপ করা হয়, তখন সবটা মিলিয়া অর্থ দাঁড়াইবে সমুদ্র হইতে জলীয় বাষ্পকে বায়ু দূরদূরান্তে ছড়াইয়া দেয় এবং জলবিন্দুপূর্ণ মেঘমালাকে বহন করিয়া একত্রে জমা করে, অতঃপর মৃদুমন্দ শান্তভাব ধারণ করিয়া বৃষ্টি-বর্ষণ করে, যাহার ফলে শুষ্ক, তৃষ্ণার্ত পোড়া যমীন ফুলে-ফলে শোভিত, শস্য-শ্যামল, হাস্য-ঝলমল বাগান-ভূমিতে পরিণত হয়। এই উপমার সহিত সমান্তরাল সামঞ্জস্য রাখিয়া আধ্যাত্মিকভাবে বিশ্লেষণ করিলে উপরোক্ত চারটি শব্দের সামগ্রিক অর্থ দাঁড়ায়ঃ এই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দ্বারা জারীকৃত আধ্যাত্মিক প্রস্রবণের পানি আকণ্ঠ পান করিয়া যে মো’মেনগণ কুরআনের সুন্দর ও সঞ্জীবনী শিক্ষামালায় ভূষিত হইয়াছিলেন, তাহারা আরব ভূখণ্ডের কোণায় কোণায় এবং পরবর্তীতে দূর-দূরান্তের দেশগুলিতে আল্লাহ্তা’লার অবতীর্ণ মহান আশীষবাণী বহন করিয়া ঐ সকল লোকদিগকে আলোকিত ও সঞ্জীবিত করিয়াছিলেন, যাহারা বহু-ঈশ্বরবাদ, নীতিহীনতা, কুসংস্কার ও চারিত্রিক হীনমন্যতার চরম অন্ধকারে আপাদমস্তক নিমজ্জিত ছিল। এই কাজে তাহারা তরবারী ব্যবহার করেন নাই বরং প্রেম-ভালবাসা ও সেবা-শান্তিকে ব্যবহার করিয়াছিলেন, যেমন বায়ু মেঘমালাকে দূরদূরান্তে বহন করিয়া তৃষিত শুষ্ক মাটিতে জলসিঞ্চন করিয়া শস্য-শ্যামল করে।