পূর্ববর্তী দুইটি আয়াতে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বিষয় বর্ণনা করার পর, এই আয়াতে বিশ্বমানবের অবিচ্ছেদ্য ও সার্বিক ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করা হইয়াছে। বস্তুতঃ এই আয়াতটি বিশ্ব-মানবের ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা মহাসনদ। জাতীয় শ্রেষ্ঠত্ব অথবা বংশগত গৌরবের মিথ্যা ধারণা হইতে উদ্ভূত আভিজাত্যের প্রতি ইহা কুঠারঘাত করিয়াছে। এক জোড়া পুরুষ-মহিলা হইতে সৃষ্ট মানবমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে সকলেই আল্লাহ্তা’লার সমক্ষে সম-মর্যাদার অধিকারী। চামড়ার রং, ধন-সম্পদের পরিমাণ, সামাজিক পদ, বংশ ইত্যাদির দ্বারা মানুষের মর্যাদার মূল্যায়ন হইতে পারে না। মর্যাদা ও সম্মানের সঠিক মাপ-কাঠি হইল, ব্যক্তির উচ্চমানের নৈতিক গুণাবলী এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি তাহার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের আন্তরিকতা। বিশ্ব-মানব একটি পরিবার মাত্র। জাতি, উপজাতি, বর্ণ, বংশ ইত্যাদি বিভক্তি কেবল পরস্পরকে জানার জন্য, যাহাতে পরস্পরের চারিত্রিক ও মানসিক গুণাবলী দ্বারা একে অপরের উপকার সাধিত হইতে পারে। বিদায়-হজ্জের সময়, মহানবী (সাঃ)-এর মৃত্যুর অল্প দিন আগে, বিরাট ইসলামী সমাগমকে সম্বোধন করিয়া তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলিয়াছিলেন, ‘হে মানব মণ্ডলী, তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদি পিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব হইতে কোন মতেই শ্রেষ্ঠ নহে। তেমনি একজন আরবের উপরে একজন অনারবেরও কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই। একজন সাদা-চামড়ার মানুষ একজন কাল-চামড়ার মানুষের চাইতে শ্রেষ্ঠ নয়, কালও সাদার চাইতে শ্রেষ্ঠ নহে। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করিতে বিচার্য বিষয় হইবে, কে আল্লাহ্ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করিল। আল্লাহ্র দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তিই, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশী ধর্মপরায়ণ’ (বায়হাকী)। এই মহান শব্দগুলি ইসলামের উচ্চতম আদর্শ ও শ্রেষ্ঠতম নীতি-মালার একটি দিক উজ্জ্বলভাবে চিত্রায়িত করিয়াছে। শতধা-বিভক্ত একটি সমাজকে, অত্যাধুনিক গণতন্ত্রের সমতা-ভিত্তিক সমাজে ঐক্যবদ্ধ করার কী আকুল আহ্বান!