২৭৫

মধ্যবর্তী পর্যায়ে কসম গ্রহণ সংক্রান্ত আয়াতের পরে, কুরআন পুনরায় দাম্পত্য-সম্পর্কের মূল বিষয়ের দিকে ফিরিয়াছে। এই আয়াতে ঐসব লোকের কথা উত্থাপন করা হইয়াছে যাহারা সত্যিকারভাবে তালাক না দিয়া, নিজের স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য-সম্পর্ক স্থাপনে বিরত থাকার কসম খাইয়াছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় এইযে, তালাকের ব্যাপার উত্থাপনের পূর্বমুহূর্তে কুরআন প্রথমে ‘ঋতুস্রাবের’ (২ঃ২২৩) কথা বলিতেছে যখন অস্থায়ী, অপূর্ণ ও অপ্রকৃত বিচ্ছেদ অবলম্বিত হয়। অতঃপর, (এই আয়াতে) অনির্দিষ্টকালের জন্য, সত্যিকার তালাক (বিচ্ছেদ) অবলম্বনের কথা বলা হইতেছে। তারপর পরবর্তী আয়াতগুলিতে বাতিলযোগ্য (প্রত্যাহারযোগ্য) বাস্তব বিচ্ছেদের বিষয় আসিয়াছে এবং সর্বশেষে ২ঃ২৩১ আয়াতে আসিয়াছে অ-বাতিলযোগ্য চূড়ান্ত বিচ্ছেদের কথা। ইহা এক চমৎকার পর্যায়ক্রম, যাহা চূড়ান্ত বিবাহ-বিচ্ছেদের পথে সম্ভাব্য সকল বাধা উপস্থাপন করিয়া, বিবাহ-বন্ধনকে অটুট ও স্থায়ী রাখতে চায়। ইসলাম যদিও বিবাহ-বিচ্ছেদকে স্বীকৃতি দেয়, তথাপি ইহাকে একটি প্রয়োজনীয় আপদ হিসাবে গণ্য করে। কোন ব্যক্তি যদি তাহার স্ত্রীর সহিত দাম্পত্য-সম্পর্ক ত্যাগ করার শপথ নেয়, তাহা হইলে ইসলাম তাহাকে চার মাস সময় দান করে। এই সময়ের মধ্যে তাহাকে স্ত্রীর সহিত সমঝোতায় আসিয়া দাম্পত্য-সম্পর্ক স্থাপন করিতে হইবে। অন্যথায় বিবাহ-বিচ্ছেদ চূড়ান্ত ও কার্যকরী হইয়া যাইবে। তালাক না দিয়া, অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ, ইসলাম কোন মতেই অনুমোদন করে না। স্ত্রীকে কাছেও রাখে না, আবার তালাকও দেয় না, এই ঝুলন্ত অবস্থায় রাখাকে ইসলাম অতি জঘন্য ও ঘৃণ্য কাজ বলিয়া মনে করে। জাহেলীয়াতের যুগে পুরুষেরা শপথ নিয়া স্ত্রীদের কাছ হইতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিচ্ছেদ অবলম্বন করিত। এই প্রথাকে ‘ইলা’ বলা হইত। এই অবস্থায় স্ত্রী ঝুলন্ত ও অনিশ্চিত থাকত। সে না পাইত স্বামী-সঙ্গ, না পারিত অন্য কাহাকেও বিবাহ করিতে।