হজ্জব্রত পালনের দিনগুলিতে যে সব বস্তু ও যে সব স্থান আবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে, কুরআনে সেইগুলিকে “শায়ায়েরুল্লাহ্” (আল্লাহ্তা’লার চিহ্নাবলী) নামে অভিহিত করা হইয়াছে (২ঃ১৫৯, ৫ঃ৩, ২২ঃ৩৩)। তাৎপর্য এই যে, ঐ গুলি এমনই প্রতীক বিশেষ যাহা হজ্জযাত্রীদের মনের গভীরে স্থায়ী রেখাপাত করে। লক্ষ লক্ষ লোক যখন কা’বা গৃহ প্রদক্ষিণ করে এবং সকল মুসলমান যেখানেই থাকুক না কেন, যখন এই একই কা’বার দিকে মুখ করিয়া নামায আদায় করে, তখন তাহাদের মনের মধ্যে আল্লাহ্র একত্ব মহিমা গভীর ভাবে ভাস্বর হইয়া উঠে। ইহা মানবজাতির একত্বেরও প্রতীক। সাফা ও মারওয়া টিলাদ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো অবস্থায় হজ্জযাত্রীকে তরুলতাশূন্য, জনমানবহীন মরুভূমিতে হাজেরা ও ইসমাঈলের চরম নিসঙ্গতা ও অসহায়ত্বের অবস্থায় তাহাদের প্রতি আল্লাহ্তা’লার কৃপা প্রদর্শনের অনন্যসাধারণ কাহিনীকে স্মরণ করাইয়া দেয়। মীনা (উম্নিয়্যা হইতে উৎপন্ন, অর্থ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য) হাজীকে স্মরণ করাইয়া দেয় যে, তিনি সেখানে আল্লাহ্-মিলনের উদ্দেশ্যে গিয়াছেন। ‘মাশ্আরুল হারাম’ (পবিত্র চিহ্ন) ইঙ্গিত দান করে যে, শুভলগ্ন সন্নিকটে। ‘আরাফাত’ মনে করাইয়া দেয় যে, তিনি সিদ্ধির দুয়ারে সমুপস্থিত। ‘ইহ্রাম’ তাহাকে কিয়ামতের দিনের কথা মনে করাইয়া দেয়। মৃতদেহ আবৃতকারী কাফনের কাপড়ের মত, তাহার দেহ তখন মাত্র দুই টুকরা সেলাইবিহীন কাপড় (এক টুকরা উপরাংশকে ও অন্য টুকরা নিম্নাংশকে) আবৃত রাখে। তাহার মস্তক থাকে অনাবৃত। এই অবস্থা (ইহরাম) তাহাকে মনে করায় যে, তিনি যেন মরিয়া পুনর্জীবিত হইয়াছেন। আরাফাতের ময়দানে লাখো মানুষের সমাগম হাশরের ময়দানের কথা মানসপটে জাগাইয়া তুলে, সকলেরই মনে হয়, তাহারা যেন হঠাৎ মৃত অবস্থা হইতে সাদা বস্ত্র-খণ্ডে আবৃত্ত হইয়া প্রভুর সম্মুখে সম্মিলিত হইয়াছেন। কুরবানীর পশুগুলি ইব্রাহীম (আঃ) কর্তৃক পুত্র ইসমাঈলকে যবাহ করার সেই ঐতিহাসিক অনন্য ঘটনার কথা হৃদয়ে পুনর্জাগরিত করে, প্রতীকী ভাষায় যাহার তাৎপর্য এই যে, মানুষ যেন সর্বদা নিজেকে, নিজের ধন-সম্পদকে এমন কি নিজের সন্তান-সন্ততিকে আল্লাহ্র রাস্তায় উৎসর্গ করিতে প্রস্তুত থাকে।