এই কথাগুলি দ্বারা বুঝা যায় যে, স্ত্রীলোকের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কাজের গণ্ডী তাহার গৃহ। ইহার অর্থ এই নয় যে, সে চারি দেওয়ালের বাহির যাইতে পারিবে না। ন্যায্য কার্য সমাধার জন্য কিংবা ন্যায্য প্রয়োজন মিটাইবার জন্য সে যতবার চাহে বাহিরে যাইতে পারে। কিন্তু গৃহকত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য অবহেলা করিয়া স্ত্রী-পুরুষের মিশ্রিত সমাজে মুক্তভাবে চলাফেরা করা কিংবা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া, যে কোন প্রকারের কাজকর্মে, পেশায় বা চাকুরী-বাকুরীতে, অবাধে পুরুষের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করিতে ইসলাম বাধা দেয়। এইরূপ করা ইসলামে স্ত্রীলোকের মর্যাদার যে ধারণা আছে উহার বিপরীত। বিশেষ করিয়া মহানবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণ বিশ্বাসীদের মাতা’ (উম্মুল মো’মেনীন) রূপে যে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তাহারই প্রেক্ষিতে তাহাদের স্বীয় গৃহে থাকা প্রয়োজন ছিল। কেননা মুসলমানগণ প্রায়শঃ তাহাদিগকে সালাম ও শ্রদ্ধাভক্তি জ্ঞাপন করিবার জন্য তাহাদের কাছে আসিতেন এবং সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে তাহাদের নিকট প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পথ-নির্দেশ চাহিতেন। এই সব নির্দেশ সকল মুসলমান স্ত্রীলোকের উপর সমভাবে প্রযোজ্য। কুরআনের বাগধারাই অনেকটা এইরূপ যে, যেখানে মহানবী (সাঃ)-কে আহ্বান করিয়া কোন কথা, উপদেশ বা নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে, সেখানে ঐ আহ্বান সমভাবে সকল মুসলমানের উপরই বর্তাইয়াছে। সেইরূপ, যে সব নির্দেশ নবী-পত্নীগণের উপরে প্রযোজ্য হইয়াছে, তাহা সমভাবে সকল মুসলমান স্ত্রীলোকের উপরও বর্তাইয়াছে। ‘আহলুল বায়্ত’ শব্দগুলি দ্বারা প্রধানতঃ ও প্রথমতঃ মহানবী (সাঃ)-এর পত্নীগণকে বুঝায়। প্রসঙ্গ হইতেও ইহাই বুঝায়। এছাড়া ১১ সূরার ৭৪ আয়াত এবং ২৮ সূরার ১৩ আয়াতেও এই কথাই বুঝায়। তবে ব্যাপক অর্থে, ইহা দ্বারা একটি পরিবারের পুত্র-কন্যা-নাতি-নাতনীসহ বাড়ীর সকল সদস্যকেও বুঝাইয়া থাকে। মহানবী (সাঃ) স্বয়ং তাঁহার কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবীকে ‘আহলে বায়ুত-এর অন্তর্গত বলিয়াছেন। মহানবীর প্রসিদ্ধ হাদীস আছে, “সালমান আমার (আহলে বায়ুত) পরিবারের সদস্য” (সগীর)।