‘দাঈ’, শব্দের বহুবচন ‘আদ্ইয়াউ’। ‘দাঈ’ অর্থ, পুত্ররূপে গৃহীত ব্যক্তি, পুত্র নয় অথচ পুত্ররূপে গৃহীত ব্যক্তি, যাহাকে স্বীয় পিতা নয় এমন ব্যক্তি পুত্ররূপে বরণ করিয়া লয়। পোষ্য-পুত্র; এমন ব্যক্তি যাহার পিতৃপরিচয় বা বংশ পরিচয় নাই। যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে পিতারূপে পরিচয় না দিয়া অন্য পিতৃ পরিচয় গ্রহণ করে (লেইন)। মহানবী (সাঃ)-এর সময়ে আরবদেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত দুইটি বদ্ধমূল কুসংস্কারকে এই আয়াতের সাহায্যে নির্মূল করা হইয়াছে। এই দুইটির মধ্যে জঘন্যতর হইল ‘যিহার’—স্বামী তাহার স্ত্রীকে রাগের মাথায় ‘মা’ ডাকিয়া ফেলিত। ফলে, স্ত্রী স্বামী-সঙ্গ হইতে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হইয়া যাইত, স্ত্রীর দাবী খাটাইতে পারিত না অথচ স্বামীর বন্ধন হইতেও মুক্ত হইতে পারিত না। নারী-স্বাধীনতার পুরোধা এই ইসলাম, এইরূপ অসহনীয় একটি বর্বর রীতিকে মোটেই সহ্য করিতে পারিল না। অন্য রীতিটি হইল অন্যের পুত্রকে নিজের পুত্ররূপে গ্রহণ করা এবং ইহাকে কার্যতঃ সত্য সত্য রক্ত-সম্পর্ক গণ্য করা। এই রীতি একেতো মিথ্যার প্রশ্রয় দেয়, দ্বিতীয়তঃ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে নানা প্রকার ফাটলের সৃষ্টি করতঃ সামাজিক জটিলতা বৃদ্ধি করে। এইরূপ করা নিরর্থক বোকামী ছিল। এই কুরীতিগুলি উঠাইয়া দেওয়ার কারণ স্বরূপ এই যুক্তি দেখানো হইয়াছে, ‘আল্লাহ্ কোন পুরুষের বক্ষাভ্যন্তরে দুইটি হৃদয় সৃষ্টি করেন নাই।’ মানুষের হৃদয়ই তাহার আবেগ ও অনুভূতির উৎসস্থল। একই সময়ে একই হৃদয় দুই ধরণের অনুভূতি ধারণ করিতে পারে না, বিপরীতমুখী ধ্যান-ধারণা ও ভাবাবেগ একই সঙ্গে সেখানে স্থান পায় না। তদুপরি, মানুষের বিভিন্ন সম্পর্ক বিভিন্ন ভাবাবেগ উদ্রেক করে। স্ত্রীকে মা ডাকিলেই কিংবা পর-পুত্রকে পুত্র ডাকিলেই, যথার্থ ভাবাবেগের উদ্রেক হইতে পারে না। স্ত্রী কখনও মাতা হইতে পারে না, অজানা-অচেনা ব্যক্তি কখনও পুত্র হইতে পারে না। কেবল মুখের বুলিতে মনের অবস্থা বদলাইতে পারে না, দৈহিক সম্পর্কের সত্যতাকেও পরিবর্তন করিতে পারে না।