বিখ্যাত আরবী বাগ্ধারা ‘কাশাফা আন সাক্বেহী’-এর অর্থ সংকটের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হওয়া অথবা বিব্রত বা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হওয়া। ‘কাশাফাত আন সাক্বায়হা’ অর্থঃ (১) সে (রাণী) পায়ের নলাদ্বয় উন্মুক্ত করিয়াছিল, (২) সে অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়াছিল, (৩) সে উদ্বিগ্ন বা কিংকর্তব্যবিমুঢ় বা হতচকিত হইয়া গিয়াছিল (লেইন এবং লিসান)। হযরত সোলায়মান (আঃ) চাহিয়াছিলেন যে, রাণী প্রতিমা-পূজা পরিত্যাগ করুক এবং সত্যের প্রতি ঈমান আনয়ন করুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিজ্ঞতার সহিত এমন উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন যাহাতে অভিজাত এবং বিচক্ষণ এই রাণী আপন পথ-ভ্রান্তি বুঝিতে পারেন। এই সৃষ্টিকোণ হইতে হযরত সোলায়ান (আঃ) রাণীর জন্য সিংহাসনটি নির্মাণ করাইয়াছিলেন। তাহার নিজ সিংহাসন যাহার জন্য রাণী গর্ববোধ করিতেন, উহা হইতেও ইহাকে সর্বতোভাবে অধিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং উৎকৃষ্টতর করা হইয়াছিল। হযরত সোলায়ান (আঃ) সেইজন্য এইরূপ করিয়াছিলেন যাহাতে রাণী উপলব্ধি করিতে পারেন যে, তিনি (আঃ) আল্লাহ্র প্রেরিত ছিলেন এবং তাঁহাকে রাণী অপেক্ষা জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক সহজাত গুণাবলীর অধিকতর প্রাচুর্যে ভূষিত করা হইয়াছিল। আয়াতে বর্ণিত রাজ প্রাসাদও একই দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হইয়াছিল। আয়াতে প্রতিপন্ন হয় যে, প্রাসাদের প্রবেশপথ কাচের আস্তরণ দ্বারা আবৃত করা হইয়াছিল যাহার তলদেশ দিয়া সফটিকতুল্য স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী প্রবাহিত ছিল। যখন রাণী প্রাসাদে প্রবেশ করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন যখন স্বচ্ছ কাচকে পানি ভ্রমে পায়ের নলাদ্বয় উন্মোচিত করিয়াছিলেন এবং পানির এই দৃশ্য তাঁহাকে হতবুদ্ধি এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় করিয়া দিয়াছিল। এই পরিকল্পিত কৌশল দ্বারা হযরত সোলায়মান (আঃ) রাণীর মনযোগ এই বাস্তব ঘটনার প্রতি পরিচালিত করিয়াছিলেন যে, কাচের আস্তরণকে তিনি যেমন পানি বলিয়া ভুল করিয়াছিলেন, ঠিক সেইরূপ সূর্য এবং অন্যান্য আসমানী অস্তিত্বসমূহ যেগুলিকে তিনি পূজা করিতেন সেগুলি আলোর প্রকৃত উৎস নহে। উহারা কেবল আলো বিকীরণ করে, কিন্তু ঐগুলি নির্জীব পদার্থ সর্বশক্তিমান খোদাতালা উহাদিগকে আলো দ্বারা বিভূষিত করিয়াছেন যাহা তাহারা বিকীর্ণ করে। এইভাবে হযরত সোলামান (আঃ) তাঁহার পরিকল্পিত লক্ষ্যে কৃতকার্য হইয়াছিলেন। সাবার রাণী তাঁহার ভ্রম স্বীকার করিয়াছিলেন এবং কাষ্ঠ ও প্রস্তর নির্মিত প্রতিমার উপাসনা ছাড়িয়া এক আল্লাহ্র তৌহীদে তথা তাহার একত্বে ঈমান আনিয়াছিলেন।