২১৬০

হুদ্‌হুদ্‌ সম্বন্ধে জনসাধারণ্যে ভিত্তিহীন উপকথা এবং অলীক কাহিনী প্রচলিত আছে যাহা যুক্তি-প্রমাণ এবং বিবেক-বুদ্ধি কোন দিক দিয়াই গ্রহণযোগ্য নহে। হুদ্‌হুদ্‌ হযরত সোলায়মান (আঃ) কর্তৃক নিয়োজিত কোন সংবাদ বাহক পাখী ছিল না। কেননাঃ (ক) একজন ক্ষমতাশালী বাদশাহ এবং আল্লাহ্‌র নবী সোলায়মান (আঃ)-এর একটি তুচ্ছ পাখীর প্রতি এত ক্রুদ্ধ হইয়া উহাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করার জন্য এমনকি উহাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত হইয়া যাওয়াটা তাঁহার উচ্চ মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নহে, (খ) মনে হয় হুদ্‌হুদ্‌ রাষ্ট্রীয় কানুন সম্বন্ধে সুপরিচিত ছিল এবং আল্লাহ্‌তা’লার একত্বের সম্বন্ধে জ্ঞান বিশারদ ছিল (পরবর্তী আয়াত ২৫-২৬) যাহা কোন পার্থীর পক্ষে সম্ভব হইতে পারে না, (গ) হুদ্‌হুদ্‌ পাখী অধিক উড্ডয়নশীল ও যাযাবর পার্থীসমূহের অন্তর্গত নহে,এইজন্য ইহা সুদীর্ঘ দূরত্বে উড়িতে পারে না। অতএব সাবা দেশ পর্যন্ত যাতয়াতের জন্য উহাকে নিয়োজিত করা যাইতে পারিত না (আয়াত-২৩)। এই সমস্ত কারণ হইতে প্রতিভাত হয় যে, হুদহুদ আসলে পাখী ছিল না, বরং মানুষ ছিল। সে অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা অথবা সেনাপতি ছিল, যাহার উপর হযরত সোলায়মান (আঃ) সাবা দেশের রাণীর নিকট গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়িত্ব অর্পণ করিয়াছিলেন। মনে হয় সোলায়মান (আঃ)-এর সময়ে দৃত বিনিময় বেশ প্রচলিত ছিল। অধিকন্তু ইহাও প্রমাণিত যে, পাখী পশুর নামানুকরণে মানুষের নাম রাখা হইত। হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর জনগণের মধ্যে হুদ্‌হুদ্‌ একটি খুবই প্রচলিত জনপ্রিয় নাম ছিল। মনে হয় বাইবেলে উল্লিখিত ‘হদদ’ নামের আরবীয় অনুকরণ এই হুদ্‌হুদ্‌ শব্দ। অনেক ইডোমাইট রাজার নাম এইরূপ ছিল। ইসমাঈল (আঃ)-এর এক পুত্রেরও এই নাম ছিল। অনুরূপভাবে এক ইডোমাইট রাজপুত্র, যে ইয়াকুব (আঃ)-এর নির্বিচার হত্যার ভয়ে মিশরে পালাইয়া গিয়াছিল, সেও এই নামে পরিচিতি ছিল (১-রাজবলী-১১ঃ১৪)। হুদ্‌হুদ্‌ নামটি এতই জনপ্রিয় ছিল এবং বাইবেলের পুরাতন নিয়মে এত বেশী ব্যবহৃত হইয়াছে যে, কোন বিশেষণ ব্যতীত ব্যবহারে ইহার অর্থ হয় ‘ইদোমিত পরিবারের এক ব্যক্তি’ (যিউ এন সাইক)। সাবার রানী বিলকিসের পিতার নামও হুদ্‌হুদ্‌ বলিয়া কথিত আছে (মুন্‌তাহা লইরাব)।