২০৫

সূরা নিসার ১২-১৩ আয়াতে, মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণের কাহার কত অংশ রহিয়াছে তাহা নির্ধারণ করা হইয়াছে। তফসীর কারকগণের কেহ কেহ ভ্রম বশতঃ, মনে করিয়াছে, সূরা নিসার আয়াত দুইটি সূরা বাকারার এই আলোচ্য আয়াতটিকে রহিত করিয়া দিয়াছে। আলোচ্য আয়াতটি প্রকৃত পক্ষে একটি অতিরিক্ত ও প্রয়োজনীয় দফা, এবং ইহাতে বর্ণিত হইয়াছে যে, ওয়ারিস নহে এমন নিকটতম ব্যক্তিকে কিংবা জনহিতকর কাজে কিংবা যুদ্ধাবস্থার কারণে সম্পত্তির অধিকারী আপন জীবদ্দশায়, উইল বা দান-পত্র সম্পাদন করিয়া, সম্পত্তির কিছু অংশ দান করিতে পারেন। এইরূপ দানের সহিত ওয়রিসগণের তেমন কোনও সম্পর্ক নাই। আইনানুগ উত্তরাধিকারীদের বিষয় সূরা নিসার ১২-১৩ আয়াতে আলাদা ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। অতএব, আলোচ্য আয়াতকে, উত্তরাধিকারের আয়াত দ্বারা রহিত করার কোনও প্রশ্নই উঠে না। ইহা বরং আলোচ্য আয়াতের আওতায় কোনও দানপত্র বা উইল সম্পাদিত হইলে, উহাকে স্বীকৃতিদানের কথা বলে। উত্তরাধিকার ও উইল উভয়ই আপন-আপন ক্ষেত্রে কার্যকরী একটি অপরটিকে শক্তি যোগায়। পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিনভাগের একভাগ দানপত্র বা উইলের মাধ্যমে দানের সর্বোচ্চ সীমা। সাদ-বিন আবি-ওক্কাস কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীস হইতে এই সীমা জানা যায় (বুখারী, কিতাবুজ জানায়েয)। সম্পত্তির অধিকারী ইহার বেশী নিজের ইচ্ছামত দান করিতে পারেন না। আর কেবল মাত্র অতি মাত্রায় থাকিলেই এই সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত উইল করিতে পারেন, নতুবা নহে। ‘খায়ের’ (অনেক ধন) শব্দ দ্বারা এই কথাই বুঝায়। সূরা মায়েদার ১০৭ নং আয়াত, যাহার ভিত্তিতে একজন মৃত্যুমুখী ব্যক্তি উইল করিতে পারেন, এই আয়াতটি যে সূরা নিসার ১২-১৩ আয়াতের পরবর্তী সময়ে নাযেল হইয়াছিল সে ব্যাপারে সকলেই একমত এবং তাহা এই অভিমতকে আরো শক্তিশালী করিয়া তুলে যে, আলোচ্য আয়াতটি ৪ঃ১২-১৩ দ্বারা রহিত হয় নাই। আসল কথা হইল যে, কুরআনের কোনও আয়াত বাতিল হওয়ার মতবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।