১৯৬২

পক্ষপাতদুষ্ট খৃষ্টান লেখকগণ এই আয়াতের স্বেচ্ছাকৃত ভুল ব্যাখ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত বিকৃত অর্থ করিয়াছে। তাহারা বলে যে, মক্কায় একদিন নবী করীম (সাঃ) সূরা আন্‌ নজমের ২০ এবং ২১ আয়াত তেলাওয়াত করিতেছিলেন, “এখন তোমরা আমাকে ‘লাত’ এবং ‘উয্‌যা’র অবস্থা শুনাও, এবং আরও একটি তৃতীয় ‘মানাতের’ অবস্থাও শুনাও” তখন শয়তান তাহার জিহ্বাতে—তিল্‌কাল্ গারানীক্বুল উলা, ওয়া ইন্না শাফা’য়াতাহুন্না লাতুর তাজা’ (ইহারা গৌরবময় দেবী এবং উহাদের শাফায়াত বা সুপারিশ আশা করা যায়) শব্দগুলি ঢালিয়া দিয়াছিল। তাহারা ইহাকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বিচ্যুতি বা ‘প্রতিমা পূজার ব্যাপারে আপোষ’ বলিয়া অভিহিত করিয়াছে। হযরত নবী করীম (সাঃ) কখনো প্রতিমা পূজার ব্যাপারে আপোষ করেন নাই, কখনই কোন বিচু্যতি তাঁহার পক্ষে ঘটে নাই। এই অভিযোগ স্রেফ কল্পিত। এই সমালোচকগণ সর্বদা নবী করীম (সাঃ)-এর দোষ-ত্রুটি আবিষ্কার করার জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকে এবং যখন কিছু পাওয়া যায় না, তখন তাহারা একটা কিছু মিথ্যা উদ্ভাবন করিয়া তাঁহার প্রতি আরোপ করে। ইহার বিস্তারিত বর্ণনা আমরা সংশ্লিষ্ট আয়াত (৫৩ঃ২০, ২১)-এর ব্যাখ্যায় করিব। এখানে শুধু ইহাই বলা যথেষ্ট হইবে যে, সমস্ত কাহিনীটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়—এই ঘটনা দ্বারা যে, বিজ্ঞ ব্যক্তিগণের সর্বসম্মত মতে, সূরা নজম আঁ-হুযুর (সাঃ)-এর প্রতি নবুওয়াতের পঞ্চম বৎসরে নাযেল হইয়াছিল, পক্ষান্তরে বর্তমান সূরা মদীনায় নবুওয়াতের ত্রয়োদশ বৎসরে অথবা হিজরতের পূর্ব মুহূর্তে নাযেল হইয়াছিল। ইহা কল্পনাতীত ব্যাপার যে, আল্লাহ্‌তা’লাকে বর্তমান সূরার মধ্যে উক্ত ঘটনা সম্বন্ধে উল্লেখ করিবার জন্য আট বৎসর অপেক্ষা করিতে হইয়াছিল। অধিকন্তু কুরআনের সকল বিজ্ঞ তফসীরকারকগণ কর্তৃক এই কাহিনী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলিয়া প্রত্যাখ্যাত হইয়াছে। ইহা ছাড়া আয়াতের কোন শব্দে এইরূপ কিছুই নাই যাহার কারণে একটা ডাহা মিথ্যার আবশ্যক হইতে পারে। আয়াতের অর্থ একেবারে সুস্পষ্ট। এই আয়াতের অভিপ্রায় হইতেছে যে, যখন আল্লাহ্‌তা’লার নবী-রসূল তাঁহার লক্ষ্যে পৌঁছার প্রচেষ্টা চালাইয়া থাকেন অর্থাৎ যখনই তিনি সত্যের বাণী প্রচার করেন এবং আকাংখা করেন যে, পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র তৌহীদ যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখনই শয়তানী শক্তিতে পরিচালিত লোকেরা তাহার পথে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়া সত্যের অগ্রগতিকে রুদ্ধ করিতে চেষ্টা করে। উহারা তাঁহার মিশন বা প্রচার কার্যকে বার্থরূপে দেখিতে চায়। কিন্তু তাহারা কখনও ঐশী-পরিকল্পনাকে ব্যাহত করিতে পারে না। আল্লাহ্‌তা’লা সর্বপ্রকার বাধা দূর করিয়া দেন এবং সত্যকে প্রাধান্য দিয়া বিজয়ী করেন। এতদ্ব্যতীত শয়তানের পক্ষে ইহা কিছুতেই সম্ভব নহে যে, সে কুরআনের পবিত্র ওহীতে দখল দিতে পারে। আল্লাহ্‌তা’লা স্বয়ং ইহাকে সকল প্রকার হস্তক্ষেপ ও প্রক্ষেপ হইতে হেফাযত ও সরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন (১৫ঃ১০, ৭২ঃ২৭-২৯)। এমনকি খৃষ্টান পণ্ডিতগণও কুরআনের এই দাবীর সত্যতা স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন।