‘এবং আমরা পর্বতমালা এবং পক্ষীকুলকে দাউদের সঙ্গে সেবায় নিয়োজিত করিয়াছিলাম,তাহারা সকলেই আল্লাহ্র তসবীহ্ করিত’ এই শব্দগুলির আক্ষরিকভাবে কেহ কেহ এই অর্থ করেন যে, পর্বত ও পক্ষীকুল দাউদ (আঃ)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এবং যখন তিনি আল্লাহ্র তসবীহ্ করিতেন তখন উহারা তাহার সঙ্গে সেই সৎকর্মে যোগদান করিতেন। উক্ত শব্দসমূহের কেবল এই অর্থ হয় যে, ধনীলোকেরা (পর্বতমালা) এবং উচ্চমার্গের রূহানী লোকগণ (পক্ষীকুল) দাউদ (আঃ)-এর সঙ্গে আল্লাহ্র মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা-গীত গাহিত। কুরআন করীমের বহু স্থানে কেবল পর্বতমালা ও পক্ষীকুল নহে, বরং আকাশ এবং যমীনের অন্যান্য সবকিছু—সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রসমূহ, দিন এবং রাত্রি, পশু, পাখি, নদী, সমুদ্র, বাতাস মেঘমালা ইত্যাদি সকলকেই মানুষের অধীন করা হইয়াছে বলিয়া বর্ণিত আছে (২ঃ১৬৫, ৭ঃ৫৫, ২২ঃ৩৮ এবং ৪৫ঃ১৩-১৪)। ‘জিবাল’ শব্দের অর্থ ইহাও হইতে পারে যে, পাহাড়ের অধিবাসীগণ, যেমন কখনও বাসস্থানের নামানুযায়ী জাতির নামও হইয়া থাকে (১২ঃ৮৩)। এইরূপে পর্বতশ্রেণী হযরত দাউদ (আঃ)-এর অধিনস্থ হওয়ার অর্থ ইহাও হইতে পারে যে, তিনি পর্বতে বসবাসকারী জংলী ও হিংস্র উপজাতিদিগকে জয় করিয়া নিজ শাসনাধীনে আনিয়াছিলেন। তিনি পাহাড়ী বন্য উপজাতিগুলিকে পরাস্তকারী এবং দমনকারী ছিলেন। পার্বত্য জাতিগুলিকে দাউদ (আঃ) কর্তৃক বশে আনার কথা বাইবেলেও উল্লেখ রহিয়াছে (২ শমূয়েল-৫)। অনুরূপভাবে পক্ষীকুল কর্তৃক আল্লাহ্তা’লার মহিমা কীর্তন উদযাপিত হওয়া বিস্ময়ের ব্যাপার হওয়া উচিৎ নহে। কুরআনের অন্যত্র আমরা পাঠ করিয়া থাকি যে, সমস্ত জিনিস সজীব অথবা নিষ্প্রাণ, ফিরিশ্তা, পশু, পাখি, আসমান এবং যমীন এমনকি প্রকৃতির শক্তি-নিচয়, আল্লাহ্তা’লার প্রশংসা গাহিয়া থাকে কিন্তু মানুষ উহাদের মহিমা বুঝিতে পারে না (১৩ঃ১৪, ১৭ঃ৪৫, ২১ঃ২০-২১; ২৪ঃ৪২ ৬৯ঃ২, ৬১ঃ২, ৬৪ঃ২)। বস্তুতঃ উহারা আল্লাহ্তা’লার দ্বারা অর্পিত আপন আপন দায়িত্ব পালন করিয়া চলিয়াছে এবং এইভাবে উহারা প্রমাণ করিতেছে যে, আল্লাহ্তা’লা পূর্ণাঙ্গ এবং সম্পূর্ণভাবে ত্রুটি, ক্ষয় এবং অক্ষমতা হইতে মুক্ত। পক্ষীকুল শব্দ প্রকৃত পাখীকেও বুঝাইতে পারে। এই অর্থে ইহার মর্ম হইবে যে, হযরত দাউদ (আঃ) পাখীদিগকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের সময় সংবাদ বহনের কাজে লাগাইতেন। ইহার মর্ম এইরূপও হইতে পারে যে, পাখীর ঝাক হযরত দাউদ (আঃ)-এর বিজয়ী সৈন্য বাহিনীর পশ্চাতে আসিত এবং তাঁহার পরাজিত শত্রুর সৈন্যের মৃত লাশগুলির উপর ভোজ উৎসব করিত।