১৮৮৪

এই আয়াত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মনে হয় ইহাতে বিশ্বের ভৌতপূর্ব অবস্থার প্রতি ইংগিত করতঃ বলা হইয়াছে যে, সমগ্র বিশ্ব, বিশেষতঃ সৌর জগৎ এক অসংবদ্ধ অবয়বহীন অবস্থা অথবা নীহারিকাবৎ পদার্থ-পিণ্ড হইতে বিবর্তন লাভ করিয়াছে। আল্লাহ্‌তা’লা তাঁহার প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে যে গতি সঞ্চার করিয়াছিলেন সেই অনুযায়ী বস্তুপিণ্ডকে বিযুক্ত করিয়া দিলেন এবং ইহার বিচ্ছিন্ন টুকরাগুলি সৌর জগতের অংশ হিসাবে রূপ নিল (The Universe Surveyed by Harold Richar & The Nature of the Universe by Fred Hoyle)। অতঃপর আল্লাহ্‌তা’লা পানি হইতে সকল জীবনের সৃষ্টি করিলেন। তফসীরাধীন আয়াতের এই পরোক্ষ অর্থ হয় যে, বস্তু-জগতের মত এক আধ্যাত্মিক জগৎও বিশৃংখল ধারণা এবং হাস্যকর বিশ্বাসের অবয়বহীন অবস্থা হইতে উদ্ভূত হয়। আল্লাহ্‌তা’লা যেমন তাঁহার ক্রুটিমুক্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে এবং অভিষ্ট লক্ষ্যের পরিকল্পনা অনুযায়ী বস্তুপিণ্ডকে বিভক্ত করিয়াছেন এবং ইহার বিযুক্ত টুকরাগুলি সৌর জগতের অংশে পরিণত করিয়াছেন, ঠিক সেইরূপেই তিনি নৈতিক অধঃগতির মধ্যে গড়াগড়ি খাওয়া বিভ্রান্তিকর ধারণার জগতে এক নূতন আধ্যাত্মিক সুশৃংখল অবস্থা ঘটাইয়া থাকেন। যখন মানবজাতি নৈতিক পতনের সূচী ভেদ্য অন্ধকারে ডুবিয়া যায় এবং আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল গভীরভাবে কলুষিত হইয়া উঠে, যখন আল্লাহ্‌তা’লা তাঁহার প্রেরিত পবিত্র মহাপুরুষের সত্তায় নূর (জ্যোতিঃ) আবির্ভূত করেন, যিনি মনকে নৈতিক অসচ্চরিত্রতা ও আত্মিক অধঃপতনের অসার অবস্থা হইতে মুক্ত করিয়া সক্রিয় করিয়া তোলেন। ফলে এক আধ্যাত্মিক জগতের জন্ম হয় যাহা ইহার কেন্দ্র হইতে সম্প্রসারিত হইতে আরম্ভ করে এবং অন্তরালবর্তী প্রেরণার তাগিদে প্রাণবন্ত জীবনের পথ-নির্দেশ লাভ করে এবং পরিণামে সমগ্র পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে।