এই আয়াতের অর্থ নিম্নলিখিত যে কোনটা হইতে পারেঃ (ক) মো’মেন ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহ্তা’লা তাঁহার ভালবাসা কীলকের ন্যায় প্রোথিত করিয়া দিবেন; (খ) মো’মেনের জন্য তাঁহার অন্তরে প্রগাঢ় ভালাবাসা কীলকের ন্যায় গাড়িয়া দিবেন; (গ) আল্লাহ্তা’লা মো’মেন লোকের অন্তরে মানবজাতির জন্য গভীর ভালবাসা কীলকের ন্যায় গাড়িয়া দিবেন এবং (ঘ) তিনি মানুষের হৃদয়ে মো’মেন লোকদিগের জন্য গভীর ভালবাসা কীলকের ন্যায় সৃষ্টি করিবেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, মুসলমানগণ যখন রোম সাম্রাজ্যের দুর্গের পর দুর্গ এবং শহরের পর শহর জয় করিতে করিতে অগ্রসর হইতেছিল তখন এক পর্যায়ে রণকৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদিগকে তথাকার কোন এক শহর হইতে পিছনে সরিতে হইল। তাহারা সেই শহরের অধিবাসীগণের নিকট হইতে তাহাদের শহর ও জান-মালের হেফাযতের উদ্দেশ্যে কিছু ট্যাক্স আদায় করিয়াছিল। তাহারা শহর ত্যাগ করিবার পূর্বে সেই ট্যাক্স শহরবাসীদের নিকট ফেরত দিয়াছিল এই বলিয়া যে, আমরা তোমাদের নিকট হইতে তোমাদের অঞ্চল ও জান-মালের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ট্যাক্স আদায় করিয়াছিলাম কিন্তু এখন যেহেতু আমরা কারণ বশতঃ শহর ছাড়িয়া চলিয়া যাইতেছি, এই জন্য তোমাদের ট্যাক্স তোমাদিগকে ফেরৎ দেওয়া হইল। মুসলমানদের বিশ্বস্ততার এই আচরণ তথাকার খৃষ্টান ও ইহুদীদের উপর এত প্রভাব বিস্তার করিল যে, তাহারা কাদিতে কাঁদিতে এবং এই দোয়া করিতে করিতে মুসলমানদিগকে বিদায় দিল যে, আল্লাহ্তা’লা তোমাদিগকে আবার ফিরাইয়া আনুন। ইহুদীগণ বলিতে লাগিল, আল্লাহ্র কসম! আমরা জীবন দিয়া দিব। কিন্তু খৃষ্টান সৈন্যদলকে শহরে প্রবেশ করিতে দিব না (ফতুহুল বুলদান বিলাবরী ১৪৩ পৃঃ)। ভালবাসার এই বাস্তব আদর্শ ঈসা (আঃ)-এর ভালবাসার শিক্ষা হইতে কত উত্তম। ঈসা (আঃ) তো শুধু বলিয়াছিলেন যে, আল্লাহ্ অর্থই ভালবাসা, কিন্তু মুসলমানগণ কার্যতঃ দেখাইয়া দিলেন যে, আল্লাহ্ অর্থই ভালবাসা। ঈসা (আঃ) ভালবাসা শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন, কিন্তু কুরআনে ‘ওদ্দুন’ শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে যাহা ভালবাসা হইতে অধিক গভীর এবং সহস্র গুণে তাৎপর্যপূর্ণ। আরবী ‘মহব্বত’ শব্দের অর্থ অন্তরে দাগ কাটল, কিন্তু ওদ্দুন শব্দের অর্থ হইল ভালবাসা এত গভীর হইল যে কীলকের ন্যায় প্রোথিত হইয়া গেল। অতএব কুরআনের শিক্ষা এবং ইঞ্জিলের শিক্ষার মধ্যে আসমান ও যমীনের ব্যবধান রহিয়াছে।