‘মিনকুম্’ শব্দের মধ্যে ‘কুম্’ সর্বনাম সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয় নাই। বর্ণনার প্রসঙ্গানুযায়ী, ইহা অবিশ্বাসীদের এবং পরকালের অস্তিত্বে সন্দেহ পোষণকারী যাহারা, কেবল তাহাদের প্রতি প্রযোজ্য। এই সকল লোকদিগের বিষয়ই পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বিরত হইয়াছে। ইবনে আব্বাস এবং ইকরিমা (রাঃ)-এর অন্য এক রেওয়ায়াতে ‘মিনকুম্’ (তোমাদের মধ্য হইতে) ‘মিনহুমু’ (তাহাদের মধ্য হইতে) রূপে বর্ণিত হইয়াছে, এবং হযরত ইবনে আব্বাস বলিয়াছেন যে, ‘মিনকুম্’ উক্তি অবিশ্বাসীদের প্রতি করা হইয়াছে (কুরতুবী)। সুতরাং ৬৭-৭১ আয়াতসমূহে উল্লেখিত অবিশ্বাসীদিগের প্রতিই ‘কুম্’ (তোমরা বা তোমাদের) স্পষ্টভাবে নির্দেশ করিয়াছে। অপর পক্ষে কুরআন করীম সুস্পষ্ট এবং জোরের সহিত এই মতের সমর্থন করে যে, ধর্মপরায়ণ বিশ্বাসীগণ কখনো দোযখে যাইবে না, তাহারা সর্বদা আল্লাহ্তা’লার ভালবাসা ও অনুগ্রহের আলোকে অবগাহন করিবে (২৭ঃ৯০ ৩৯ঃ৬২, ৪৩ঃ৬৯, ইত্যাদি) এবং জাহান্নাম হইতে বহুদূরে অবস্থান করিবে এবং উহার ক্ষীণতম শব্দও তাহাদের কানে পৌঁছিবে না (২১ঃ১০২-১০৩)।কিন্তু যদি মো’মেন এবং কাফের উভয়কে ‘কুম্’ (তোমাদের)-এর অন্তর্ভুক্ত করিয়া নেওয়া হয়, তাহা হইলে কাফেরদিগের ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হইবে যে, তাহারা সকলেই জাহান্নামে যাইবে এবং মো’মেনগণের ক্ষেত্রে আয়াতে ইশারাক্ত দোযখের মর্ম হইবে ইহজীবনে যে পরীক্ষা ও মানসিক যন্ত্রণারূপ অগ্নির মধ্য দিয়া তাহাদিগকে অতিক্রম করিতে হয় এবং যাহা অত্যন্ত দৃঢ়তাপূর্ণ ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করিতে হয় এবং যাহার মধ্য হইতে পরিণাম স্বরূপ তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়া শান্তি এবং জান্নাতের সুখের মধ্যে ছাড়িয়া দেওয়া হয় যেমন পরবর্তী আয়াতে প্রতিভাত হইয়াছে। আঁ-হযরত (সাঃ) নিজে এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়াছেন। তাঁহার স্ত্রী হাফসা (রাঃ) হইতে বর্ণিতঃ ‘একদা যখন নবী করীম (সাঃ) বলিতেছিলেন যে, তাঁহার ঐ সকল সাহাবা দোযখে যাইবেন না, যাহারা বদরের যুদ্ধে বা ওহদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করিয়াছিলেন, তখন আমি এই আয়াতের প্রতি আঁ-হুযুর (সাঃ)-এর মনোযোগ আকর্ষণ করিলে, ইহার ভুল অর্থ করার জন্য তিনি আমাকে মৃদু তিরষ্কার করিলেন এবং বলিলেন, ‘পরবর্তী আয়াত পাঠ কর’ (মুসলিম, যেভাবে জামীউল বায়ান উল্লেখ করিয়াছে)। রসূল করীম (সাঃ)-এর পবিত্র স্ত্রী হাফসা (রাঃ)-কে পরবর্তী আয়াত ৭৩ এর প্রতি নির্দেশ দ্বারা বুঝা যায় যে, আঁ-হযুর (সাঃ)-ও উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত ‘সুম্মা’ অংশের অর্থ সংযোজনকারী এবং বুঝিয়াছিলেন এবং পরবর্তী আয়াতকে স্বাধীন ও পৃথক ধারা বলিয়া জানিতেন, নূতবা তিনি হযরত হাফসা (রাঃ)-কে তফসীরাধীন আয়াতের ভুল অর্থ বুঝার কারণে তিরষ্কার করিতেন না।