১৭৬৬

ইহুদী বয়োবৃদ্ধদের নিকট ঈসা (আঃ) যে কথাগুলি বলিয়াছিলেন এবং যাহা ৩১-৩৪ আয়াতসমূহে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে, সেইগুলি নিশ্চয়ই কোন শিশুর মুখের কথা হইতে পারে না। দৃঢ়তা সহকারে এই সকল ঘোষণা এক বাচ্চার মুখ হইতে নিঃসৃত কতকগুলি মিথ্যা উক্তির মত শোনায়। বয়স ও কথার মধ্যে এইরূপ অসামঞ্জস্য ও অসঙ্গতি থাকায় কেহ এইগুলিকে সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে পারে না। সেই সময় ঈসা (আঃ) না নবী ছিলেন, না তখন তিনি ইবাদত করিতেন বা যাকাত দিতেন, না তাঁহাকে তখন কিতাব দেওয়া হইয়াছিল। উপরন্তু এই অলৌকিক ব্যাপারের উল্লেখ ৩ঃ৪৭ আয়াতে রহিয়াছে এইভাবে যে, ঈসা (আঃ) দোলনায় লোকদিগের সহিত কথা বলিয়াছিলেন এবং পৌঢ় বয়সেও। কিন্তু প্রৌঢ় বয়সে মানুষের কথা বলা কোন অলৌকিক ব্যাপার নহে। ‘প্রৌঢ় বয়সে’ শব্দের সঙ্গে ‘দোলনা’ শব্দ যোগ করিয়া, কুরআন করীম পরোক্ষভাবে প্রকাশ করিতেছে যে, সাধারণ্যে প্রচলিত অর্থে ঈসা (আঃ)-এর মধ্য বয়সে এবং দোলনায় কথা বলা কোন অলৌকিক ঘটনা ছিল না, কিন্তু ইহা অলৌকিক ব্যাপার ছিল এই অর্থে যে, তিনি শৈশবে এবং প্রৌঢ়ত্বে ব্যতিক্রমী বা অসাধারণ আধ্যাত্মিক জ্ঞানগর্ভ ও বুদ্ধিমত্তার কথা বলিয়াছিলেন। সদৃশ দুই শব্দ সমষ্টির সংযোজনে এক ভবিষ্যদ্বাণী নিহিত ছিল যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) যৌবনে মৃত্যুবরণ করিবেন না, বরং পরিপূর্ণ বৃদ্ধ বয়স প্রাপ্ত হইবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীই প্রকৃত অলৌকিকত্ব প্রকাশ করিয়াছিল। কিন্তু ‘মাহদা’ শব্দের অন্য অর্থ ‘প্রস্তুতিকাল’ যাহা এই শব্দের আর এক অর্থও বটে, যদি এই অর্থ লওয়া হয় তাহা হইলে ৩ঃ৪৭ আয়াতের মর্ম হইবে যে, ঈসা (আঃ) তাঁহার বয়স এবং অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেক বেশী উন্নত বুদ্ধিমত্তা এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানপূর্ণ কথা বলিবেন।