১৭৫৫

স্বামী সংসর্গ ব্যতিরেকে হযরত মরিয়ম কিরূপে গর্ভধারণ করিয়াছিলেন তাহা আল্লাহ্‌তা’লার সেই সকল গোপন রহস্যের অন্যতম যাহা এখন পর্যন্ত মানব-বুদ্ধির দ্বারা নির্ধারণ করার বাহিরে। এখনও পর্যন্ত সাধারণ প্রাকৃতিক বিধান সম্বন্ধে আমরা যতদূর জানিতে পারিয়াছি ইহা উহার অনেক উর্ধ্বে। কিন্তু মানুষের সর্বোচ্চ জ্ঞানও অত্যন্ত সীমিত। মানুষ সকল প্রকার ঐশী গুপ্ত তথ্য উপলব্ধি করিতে সক্ষম হয় নাই। প্রকৃতির মধ্যে এমন রহস্য বিদ্যমান যাহা মানুষ এখনও উদঘাটন করিতে সক্ষম হয় নাই, সম্ভবতঃ সে কখনও উহাতে সক্ষম হইবে না। সেই সবের মধ্যে পিতা ছাড়া ঈসা (আঃ)-এর জন্ম একটি ধরিয়া নেওয়া যায়। আল্লাহ্‌তা’লার পদ্ধতি দুর্জেয় ও দুর্বোধ্য এবং তাঁহার শক্তি অসীম। কেবল ‘কুন’ (হও) শব্দ উচ্চারণে যেই খোদা এই বিশ্ব সৃষ্টি করিতে পারিয়াছিলেন, নিশ্চয়ই তিনি জড় পদার্থে এরূপ পরিবর্তন আনয়ন করিতে পারেন যাহা বাহ্যদৃষ্টিতে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা সমাধান করা অসম্ভব। অধিকন্তু, চিকিৎসা-বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি হইতে প্রকৃতির বিশেষ অবস্থাধীনে যৌন-সংসর্গ ব্যতীত সন্তান জন্ম বা পুরুষের স্পর্শ ব্যতিরেকে নারীর সন্তান উৎপাদনের সম্ভাব্যতা নাকচ করা যায় না। চিকিৎসাবিদগণ নারীর শ্রোণীতে বা নিম্নাঙ্গের ভিতর সময় সময়ে প্রাপ্ত আরেনো ব্লাসটোমা নামীয় এক বিশেষ প্রকার টিউমারের কারণে এই সম্ভাবনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। এই সব টিউমার পুরুষ শুক্রাণু বা পুং-জননকোষ উৎপাদন করিতে সক্ষম। যদি এই ‘আরেনো ব্লাসটোমা’ দ্বারা কোন নারী দেহে স্বক্রিয় বা জীবিত পুং-জনন কোষ সৃষ্টি হয় তাহা হইলে সেই নারী কুমারী হইলেও তাহার গর্ভধারণ করার সম্ভাব্যতা অস্বীকার করা যায় না, অর্থাৎ তাহার নিজ দেহ এইরূপভাবে ক্রিয়াশীল হইবে যেন কোন পুরুষের দেহ হইতে শুক্রাণু সাধারণ প্রক্রিয়া দ্বারা অথবা কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর সাহায্যে তাহার দেহে স্থানান্তরিত হইয়া থাকে। সাম্প্রতিককালে ইউরোপের এক দল স্ত্রী-রোগ বিশারদ সন্তান প্রসবের দৃষ্টান্ত প্রমাণ করিতে এমন সব ঘটনা প্রকাশ করিয়াছেন যেখানে প্রসূতি মাতার কোন সম্পর্ক বা সংযোগ কোন পুরুষের সঙ্গেই ছিল না (Lancet) ঈসা (আঃ)-এর জন্ম পিতার সংযোগ ব্যতিরেকে হওয়ার ব্যাপারটা বোধ হয় সম্পূর্ণভাবে একমাত্র ও অদ্বিতীয় ঘটনা নহে। পিতা ছাড়া শিশুর জন্মের বহু ঘটনার প্রমাণ রহিয়াছে (এনসাইক ব্রিট এর ‘ভারজিন বার্থ’ অধ্যায় এবং এ্যানোমোলিস এণ্ড কিউরিওসিটিস অব মেডিসিন, ডব্লিউ বি সাউনডারস কোং, লণ্ডন কর্তৃক প্রকাশিত)। যদি আমরা এই সমস্ত সম্ভাবনাকে বাদ দেই এবং অগ্রাহ্য করি তাহা হইলে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম, নাউযুবিল্লাহ অবৈধ বিবেচিত হইবে। খৃষ্টান এবং ইহুদী উভয়ে এক মত যে, ঈসা (আঃ)-এর জন্ম সাধারণ অবস্থার ব্যতিক্রম— খৃষ্টানদিগের মতে ইহা অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত এবং ইহুদীগণের মতে ইহা অবৈধ ছিল (যিউ এনসাইক)।এমন কি পারিবারিক কুষ্ঠি-নামাতেও ঈসা (আঃ)-এর জন্ম এইরূপেই লিপিবদ্ধ রহিয়াছে (তালমুদ)। কেবল মাত্র এই বাস্তব ঘটনাটাই গ্রহণযোগ্য প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করে যে, ঈসা (আঃ)-এর জন্ম অসাধারণ ছিল। বাইবেলের নূতন নিয়মানুযায়ী মরিয়মের স্বামী যোসেফ ঈসা (আঃ)-এর জন্মের পর পর্যন্ত তাঁহার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে নাই (মথি-১ঃ২৫)। অতএব, ‘সে তাহাকে গর্ভে ধারণ করিল’ বাক্যাংশ কোন পুরুষের সংসর্গ ছাড়া হযরত মরিয়মের অসাধারণভাবে গর্ভবতী হওয়ার প্রতি ইংগিত করিতেছে।