বর্তমান ও পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বর্ণিত ঘটনা কাশ্ফের মধ্যে ঘটিয়াছিল। কাশ্ফের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার অনুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া থাকে। স্বপ্নের মধ্যে তাহার অনুভূতি এবং কথা কখনো স্বপ্নেরই প্রভাব এবং উহার ফলাফল বহন করে, আবার কখনো এইরূপ করে না এবং সে স্বপ্নের ঘটনাকে বাস্তব মনে করে এবং অনুভব করে যেমন সে জাগ্রত অবস্থায় করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ স্বপ্নে কোন লোক যদি তাহার পুত্রের মৃত্যুতে খুশী হয়, তাহার এই অনুভূতি স্বপ্নেরই আরোপিত প্রভাব-বলয় বুঝিতে হইবে, কারণ কোন সুস্থ প্রকৃতির মানুষ জাগ্রত অবস্থায় তাহার পুত্রের মৃত্যুতে আনন্দিত হইতে পারে না। অনুরূপভাবে কাশ্ফে ফিরিশ্তাকে দেখিয়া মরিয়ম যে কথাগুলি বলিয়াছিলেন উহা স্বপ্নের প্রভাবাধীন হইয়া বলিয়াছিলেন; কেননা তাঁহাকে যখন শুভ সংবাদ দেওয়া হইয়াছিল তখন তিনি আনন্দদায়ক বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া ভাবিলেন, খোদা কি এক পুত্র দান করিয়া এরূপ অলৌকিক ব্যাপার ঘটাইবেন? কিন্তু যদি এই কথাগুলি তাঁহার স্বাভাবিক এবং বাস্তব অবস্থার উক্তি হইত তাহা হইলে পুত্র জন্মের এই সুসংবাদ শুনিয়া তিনি সম্পূর্ণরূপে হত-বুদ্ধি এবং আতঙ্কগ্রস্ত হইয়া পড়িতেন এই চিন্তায় যে, তাঁহার মত এক কুমারীর এক পুত্র জন্ম হইবে! মোট কথা প্রথমোক্ত অবস্থায় অর্থাৎ কাশ্ফের অবস্থায় আল্লাহ্তা’লা হযরত মরিয়মকে পুত্র সন্তান দান পূর্বক যে মহান অনুগ্রহে ভূষিত করিতে যাইতেছিলেন উহাতে তাঁহার আনন্দ ও হর্ষবোধক বিস্ময় প্রকাশ পায়, যাহা কাশ্ফে ঘটিয়াছিল, কিন্তু শেষোক্ত অবস্থায় তাঁহার উক্তি মনের আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে নিজেকে নিঃসঙ্গবোধ করার ভাব প্রকাশ করে, যাহা আসলে ঘটে নাই। কিন্তু পক্ষান্তরে কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করে নাই কথাগুলি দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, হযরত মরিয়ম বুঝিয়াছিলেন যে, উক্ত সংবাদটির মর্ম ছিল যে, বিবাহ বন্ধন ছাড়াই তিনি এক সন্তান লাভ করিবেন, বৈবাহিক সূত্রে কোন পুরুষ মানুষকে না জানার অস্বীকৃতির মধ্যে কোন যৌক্তিকতা ছিল না। ‘আমি ব্যাভিচারিণীও নহি’ এই কথাগুলি বৈধ দাম্পত্যের বহির্ভূত কোন মানুষকে জানার সম্পর্কে অস্বীকার বুঝাইতেছে। ফিরিশ্তার কথায় তাঁহার প্রতিউত্তরে দেখা যায় যে, মরিয়ামের মনে ভাবান্তর দেখা দিয়াছিল যে, পূর্বাহ্নেই চির কৌমার্যের শপথ ’তাহার সন্তান হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হইয়া রহিয়াছিল। কুরআনের কোন কোন তফসীরকারকের ধারণা অনুযায়ী পূর্ববর্তী আয়াতের ভবিষ্যদ্বাণীতে এক পুত্রের জন্ম কোন এক ভবিষ্যৎ সময়ে তাঁহার দাম্পত্য সম্পর্কের ফল স্বরূপ হইবে বলিয়া তিনি ভাবিয়াছিলেন। যদি তাহাই হয় তাহা হইলে মরিয়মের পক্ষে সেই সময়ে বিস্ময় প্রকাশ করার কোন কারণ ছিল না।