১৭৪৭

পরবর্তী কতিপয় আয়াতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর পিতৃহীনভাবে জন্মগ্রহণ সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত বর্ণনার ভূমিকা স্বরূপ হযরত মরিয়ম সম্পর্কিত কুরআন এবং বাইবেলের নতুন নিয়মে বর্ণিত কতক ঘটনার এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। গর্ভধারণের পূর্বে হযরত মরিয়মের জীবন সম্বন্ধে বাইবেলের নতুন নিয়মে প্রকৃত পক্ষে স্পষ্ট কোন উল্লেখ নাই। মথি এবং লুক কর্তৃক বর্ণিত খৃষ্টের জীবন-কাহিনীতে তাঁহার জীবনের উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বের পরিস্থিতি সম্পর্কে যৎপরোনাস্তি সংক্ষিপ্ত ও অবান্তর বর্ণনা রহিয়াছে, কিন্তু মার্ক এবং যোহন এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। মথির মতে যোসেফের (ইউসুফের) সহিত বিবাহিত হওয়ার সময় মেরী সন্তান-সম্ভবা ছিল। যোসেফ তাহাকে পরিত্যাগ করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, কিন্তু এই চরম পন্থা অবলম্বনে ফিরিশ্‌তা স্বপ্নে যোসেফকে এই বলিয়া নিবৃত্ত করিয়াছিলেন ‘যোসেফ দায়ূদ-সন্তান, তোমরা স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্ম নিয়াছে তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে (মথি-১ঃ১৯-২০)।’ যাহা হউক কুরআন করীম মেরীর পরিবার সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত বিবরণ দিয়াছে—যে পরিস্থিতি ও পরিবেশে তাঁহার জন্ম হইয়াছিল, তাহার মাতার শপথ, উপাসনালয়ের কাজে মেরীর জীবন উৎসর্গকরণ এবং সর্বশেষ ঈসা (আঃ)-কে তাঁহার গর্ভে ধারণ সম্পর্কে (৩ঃ৩৬,৩৭,৪৮)। বর্তমান সূরা হযরত মরিয়ম সম্বন্ধে ততোধিক বিশদ বর্ণনা করিয়াছে, যথাঃ ঈসা (আঃ)-কে গর্ভে ধারণ এবং তাঁহার জন্মের পর মরিয়ম ও ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গে কি ঘটিয়াছিল এবং ঈসা (আঃ)-এর উপর নবুওয়াতের দ্বায়িত্বভার অর্পণের পর কি ঘটিয়াছিল। এইরূপে হযরত মরিয়ম সম্পর্কে সকল প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা এবং যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নবুওয়াতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যাহা ইসরাঈলের বংশ হইতে ইসমাঈলের বংশে পরিবর্তিত ও স্থানান্তরিত হওয়া নিকটবর্তী হইয়াছিল, ইহাই বর্তমান সূরার প্রধান বিষয়বস্তু। এখানে এই আয়াতে ‘পূর্বদিকে অবস্থিত এক স্থান’ কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে, সম্ভবতঃ ইহুদীদিগের সম্মানিত প্রাচীন প্রথার প্রতি নির্দেশ করার জন্য— তাহারা পূর্ব দিককে পবিত্র মনে করিত। ইহুদী এবং খৃষ্টান জাতি উভয়ে পূর্ব দিককে সম্মান করিয়া থাকে। তাহারা তাহাদের উপাসনালয়সমূহ পূর্বমুখী করিয়া নির্মাণ করে।