১৭০৮

তখন তাহারা এমন একজন বান্দার সাক্ষাৎ পাইল। কে এই “আল্লাহ্‌র বান্দা” যাহার উপর আল্লাহ্‌তা’লা অনুগ্রহ করিয়াছিলেন এবং যাহাকে তিনি বিশেষ শিক্ষা দিয়াছিলেন এবং কাহার সন্ধানে, ঐশী নির্দেশ অনুসারে হযরত মূসা (আঃ) এত দীর্ঘ ও কষ্টকর সফর করিয়াছিলেন এবং কে এই বিখ্যাত কেন্দ্রবিন্দু এবং সমস্ত ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র? তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া আর কে? তাঁহারই আত্মা দৈহিক রূপে মূসা (আঃ)-এর কাশ্‌ফে পরিদৃষ্ট হইয়াছিল। ইহার যুক্তি সমূহ হইতেছেঃ (ক) তাঁহাকে আব্‌দ (আল্লাহ্‌র বান্দা) বলা হইয়াছে কুরআন করীমে (২ঃ২৪.৮ঃ৪২; ১৭ঃ২, ১৮ঃ২; ২৫ঃ২; ৩৯ঃ৩৭; ৫৩ঃ১১; এবং ৭২ঃ২০) অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে ও গুণে তিনিই আবদুল্লাহ্ (আল্লাহ্‌র দাস)। (খ) তাঁহাকে রহমাতুল্লিল আলামীন (সারা বিশ্বের জন্য রহমত) একমাত্র পবিত্র মহানবী (সাঃ) ব্যতীত আর কাহারো জন্য কুরআনে ব্যবহৃত হয় নাই। (গ) তাঁহাকে স্বেচ্ছায় বা সানুগ্রহে আধ্যাত্মিক ও অতুলনীয়ভাবে বর্ধিত ঐশী-জ্ঞান প্রদান করা হইয়াছিল (৪ঃ১১৪ঃ ২০ঃ১১৫ এবং ২৭ঃ৭)।(ঘ) মূসা (আঃ)-কে ‘আল্লাহ্‌র (এই) বান্দা’ বলিয়াছিলেন যে, তিনি (মূসা) চুপ থাকিবেন না (আয়াত ৬৮), এবং নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন, যেমন বর্ণিত হইয়াছে, যে, মূসা কি ধৈর্য ধারণ করিতে পারিয়াছিলেন! যদি তিনি এইরূপ করিতেন, তাহা হইলে আমরা অধিক পরিমাণে গায়েবের জ্ঞান দ্বারা অনুগৃহীত হইতাম’ (বুখারী, কিতাবুত্ তফসীর)। প্রকৃত ঘটনা হইল মূসা (আঃ) আল্লাহ্‌তা’লার প্রকাশ্য নিদর্শন দেখিয়াছিলেন ‘আগুনের মধ্যে’ যখন মিদিয়ান হইতে মিশরের দিকে যাইতেছিলেন (২৮ঃ৩০)। যাহা হউক পরবর্তী সময়ে তাঁহাকে (মূসাকে) আল্লাহ্‌তা’লা জানাইয়াছিলেন যে, ঈসরাঈলের ভাইদের মধ্য হইতে এক নবীর আবির্ভাব হইবে যাহার মুখে আল্লাহ্ নিজের কথা (কালাম) প্রকাশ করিবেন (দ্বিতীয়-১৮ঃ১৮-২২)। ভবিষ্যদ্বাণীর কথাগুলির মর্ম ইহাই যে, প্রতিশ্রুত নবী আল্লাহ্‌তা’লার রহত্তর প্রকাশের স্থল ও নিদর্শনের লক্ষ্য বস্তু হইবেন। সুতরাং মূসা (আঃ) স্বভাবতঃই তাঁহাকে দেখার আকাংখা করিয়াছিলেন, কে হইতে পারেন সেই নবী। তাঁহার অর্থাৎ মূসা (আঃ)-এর কৌতুহল নিবারণের জন্য আল্লাহ্‌তা’লা তাঁহাকে অনেক বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিশালী সেই নবীকে কাশ্‌ফে দেখাইয়াছিলেন। মূসা (আঃ)-এর কাশ্‌ফে দর্শনলব্ধ এই মহাজ্ঞানী “আল্লাহ্‌র বান্দা”—যিনি সাধারণ্যে প্রচলিত খিজির’ নামে পরিচিত—তিনি আমাদের মহান নেতা পবিত্র মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁহারই পবিত্র আত্মা আধ্যাত্মিক জগতে দৈহিক অবয়ব ধারণ করিয়াছিল (আরো দেখুন ৭ঃ১১৪)।