১৭০৪

এই আয়াত দ্বারা হযরত মুসা (আঃ)-এর ইস্‌রা (আধ্যাত্মিক নৈশ-ভ্রমণ)-এর বিষয় আরম্ভ হইয়াছে। উপরে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর শিষ্যগণ প্রচুর পার্থিব ক্ষমতা ও উন্নতির অধিকারী হইয়াছিল এবং তাহাদের বৈচিত্রপূর্ণ জীবনের অগ্রগতিতে পৃথিবীর ইতিহাসে দুইবার অমোচনীয় ছাপ ও প্রভাব রাখিয়াছিল। খৃষ্টান জাতিসমূহের এই সাফল্য ৩৩ আয়াতে উল্লেখিত “দুইটি বাগান” এর সাদৃশ্য দ্বারা বর্ণনা করা হইয়াছে। এই দুই যুগের প্রথমটির সূচনা হইয়াছিল রোম সম্রাট কনষ্ট্যানটাইনের খৃষ্টধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে, যখন ইহা রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপে স্বীকৃত হইয়াছিল এবং তাহা ইসলাম ধর্মের নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের পূর্ব পর্যন্ত চলিয়াছিল। এই দুই যুগের দ্বিতীয় এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ যুগটি বর্তমান যুগ, এ সময়ে পাশ্চাত্যের খৃষ্টান জাতিগুলি এত বেশী ক্ষমতা ও গৌরব অর্জন করিয়াছে যে, এশিয়া এবং আফ্রিকার জাতিসমূহ যেন কৃতদাসবৎ দায়বদ্ধ কৃষক এবং কেনা গোলামের মত তাহাদের আদেশ ও অনুকম্পার অপেক্ষায় উন্মুখ হইয়া থাকে। এই “দুইটি বাগান”-এর মধ্যবর্তী স্থানে নহর প্রবাহিত (আয়াত-৩৪)। এই ‘নহর’ ইসলামের জন্ম এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার নিদর্শন জ্ঞাপন করে, যাহা এই দুইটি যুগের মধ্যবর্তীকালে মানবজাতির ইতিহাসে এক গভীর ছাপ রাখিয়াছিল। এই বিষয়ে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে এবং ইহাকে সংযুক্ত ছিদ্রের ন্যায় পরিদৃষ্ট করিবার জন্য,হযরত মূসা (আঃ)-এর ‘ইস্‌রা’ বা আধ্যাত্মিক ভ্রমণ বৃত্তান্তের কিছুটা বিস্তারিত বর্ণনা বর্তমান তফসীরাধীন এবং পরবর্তী কতক আয়াতে দেওয়া হইয়াছে। মূসা (আঃ) তাঁহার সদৃশ্য এক নবীর আবির্ভাব সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন (দ্বিতীয় বিবরণ-১৮ঃ১৮)। উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীকে কুরআন করীমের ৭৩ঃ১৬ আয়াতে সম্পর্কযুক্ত করা হইয়াছে। খৃষ্টধর্মের সূচনা এবং ইহার পরবর্তী উন্নতি এবং অগ্রগতি দুইটি যুগের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুহাবাসীগণ ইয়া’জুজ-মা’জুজ (গগ এণ্ড ম্যাগগ)-এর আবির্ভাবের মধ্যবর্তী সময়ে মূসা (আঃ)-এর আধ্যাত্মিক সফরের কথা বর্ণনার মধ্য দিয়া কুরআন মজীদ, তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখিত ইসলামের নবী করীম (সাঃ)-এর আগমনের ঘটনাকে নির্দিষ্ট করিয়াছে, যিনি মূসা (আঃ)-এর অনুরূপ এবং উক্ত দুই যুগের মধ্যবর্তী সময়ে যাঁহার আবির্ভাব হওয়া নির্ধারিত ছিল। এইরূপে এই সকল ঘটনা প্রবাহ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় উল্লেখিত হইয়াছে।