কুরআন করীমকে দুই শ্রেণীর লোকের প্রয়োজন মিটাইতে হইয়াছিল। (১) প্রত্যক্ষভাবে যাহাদিগকে সম্বোধন করা হইয়াছিল তাহাদিগের (মক্কাবাসী) অস্থায়ী আপত্তির উত্তর দিতে হইয়াছিল এবং ইসলামে নবদীক্ষিত মুসলমানদিগের আধ্যাত্মিক চাহিদা জরুরীভাবে পূরণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন মিটাইতে হইয়াছিল। (২) ইহাকে সর্ব যুগের মানবের বহুসংখ্যক এবং বিবিধ সমস্যাবলীর পথনির্দেশের নীতিমালা প্রদান করিতে হইয়াছিল। এই আয়াতে বলা হইয়াছে যে, পৌত্তলিকদের আপত্তিসমূহের বিচারের উদ্দেশ্যে এবং প্রথম যুগের নও-মুসলিমদিগের আধ্যাত্মিক পরিচর্যা বা শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে কতক আয়াত স্বাভাবিক কারণেই প্রথমে নাযেল হইয়াছিল এবং যে সকল আয়াত মানুষের স্থায়ী রূহানী প্রয়োজনের সাথে সম্পর্কিত সেইগুলি পরে নাযেল হইয়াছিল। এই সকল কারণে কুরআন শরীফের আয়াতসমূহ ক্রমে ক্রমে নাযেল হইয়াছিল। যখনই কোন বিশেষ আপত্তি কাফেরগণ কর্তৃক উত্থাপিত হইত, তখন সেইসব আপত্তির জওয়াব-সম্বলিত আয়াতসমুহ নাযেল হইত। এইরূপে যখন প্রাথমিক মুসলমানদিগের জন্য কোন বিশেষ শিক্ষা দেওয়ার জন্য উপদেশমালার দরকার হইত তখন সেই চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় এবং তৎসংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ নাযেল হইত। উক্ত পদ্ধতিতে মূলতঃ কুরআন মজীদ নাযেল হইয়াছিল বটে, কিন্তু যেহেতু উপস্থিত লোকদিগের অস্থায়ী প্রয়োজন, মানব জাতির সর্ব সাধারণের জন্য স্থায়ী প্রয়োজন হইতে ভিন্নতর ছিল, সেইজন্য পরবর্তী সময়ে কুরআন করীম যেভাবে বিন্যস্ত করিয়া গ্রন্থাকারে সংকলিত হইয়াছিল, উহা স্বাভাবিক কারণেই নাযেলকৃত পদ্ধতি হইতে ভিন্নরূপ হইয়াছিল।