এই আয়াত দ্বারা ঐ সকল নিয়ম-নীতি এবং আচরণ-বিধি সূচিত হইয়াছ যাহা মানিয়া চলিলে জনগোষ্ঠী তাহাদের সংগঠনে বিশুদ্ধতা বা অখণ্ডতা অক্ষুন্ন রাখতে পারে এবং বিচ্ছিন্নতা এবং বিভক্তি ও অবক্ষয় হইতে সংগঠনকে নিরাপদ রাখতে পারে। আল্লাহ্তা’লার একত্বে বিশ্বাসকে গৌরবের স্থান দেওয়া হয় এবং শিরককে নিন্দার স্থান। কিন্তু আল্লাহ্তা’লার একত্বে বিশ্বাস হইল সেই বীজ যাহা হইতে সকল নৈতিক উৎকর্ষতার জন্ম হয় এবং যাহার অভাব সকল পাপের মূল। ইহাই অর্থাৎ তওহীদের উপর ঈমানই হইতেছে—প্রাকৃতিক নিয়মের বিধান এবং শরীয়াতের বিধান— উভয়ের বুনিয়াদ। ঐশী বিধানের নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্তা’লার একত্ববাদ বা তওহীদের ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত এক প্রকাশ্য বাস্তবতা যাহা ব্যাখ্যার প্রয়োজন করে না, এমনকি প্রকৃতির বিধান এবং সকল বৈজ্ঞানিক উন্নতির ভিত্তিও স্থাপিত এই বিশ্বাসের উপর। কারণ যদি ধরিয়া নেওয়া হয় যে, একের অধিক সৃষ্টি-কর্তা বা খোদা রহিয়াছেন, তাহা হইলে একাধিক প্রাকৃতিক বিধান অবশ্যম্ভাবী হইয়া পড়ে। অটল এবং অবিচল একক প্রাকৃতিক নিয়মের অভাবে বিজ্ঞানের সকল ক্রমোন্নতি অচল হইয়া যাইবে, কারণ বিজ্ঞানের সর্বপ্রকার আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এই বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল যে, এক নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম-নীতি সুসমন্বিত ভাবে সারা বিশ্বকে পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছে। এই আয়াতের দ্বিতীয় অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ হইল মানবের নৈতিক আচরণ সম্পর্কে। পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাজনিত বাধ্যবাধকতা ইহার অতি জরুরী অংশ, কারন পিতা মাতাই সর্বপ্রথম মানুষের মনযোগ আল্লাহ্র প্রতি পরিচালিত করে এবং পিতা-মাতার চরিত্র দর্পণে ঐশী গুণাবলী প্রতিবিম্বিত হয়;এবং দর্পণ অনুযায়ী চেহারার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু যেখানে আল্লাহ্তা’লা সম্পর্কিত নির্দেশ না-বোধক সেখানে পিতা-মাতা সম্পর্কিত আদেশ হাঁ-বোধক ! মানুষকে বলা হইয়াছে, যেহেতু তার পক্ষে আল্লাহ্তা’লার অনুগ্রহরাজির প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু সে যেন অন্ততঃপক্ষে শিরক্ থেকে বিরত থাকে এবং পিতা-মাতার ক্ষেত্রে তাহাদের স্নেহ-ভালবাসার প্রতিদানে সে অনেকাংশে সক্ষম হওয়ায় তাহাদের প্রতি উদার ও স্নেহশীল হওয়ার জন্য স্পষ্টরূপে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে।