এই আয়াতে বনী ইসরাঈল জাতির দ্বিতীয়বার পূর্ববর্তী পাপাচারণের কুঅভ্যাসে পুনরায় লিপ্ত হওয়া এবং উহার ফলে তাহাদের উপরে নিপতিত আযাব সম্বন্ধে বলা হইয়াছে। তাহারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর নির্যাতন করিয়াছিল এবং তাঁহাকে ক্রুশবিদ্ধ করিয়া হত্যা করিতে চাহিয়াছিল এবং তাঁহার প্রচার বন্ধ করিয়া দিতে চাহিয়াছিল। অতএব, আল্লাহতা‘লা ইহুদীদিগকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব দ্বারা দুর্দশাগ্রস্ত করিয়াছিলেন যখন টাইটাসের রোমান সৈন্যবাহিনী ৭০ খৃষ্টাব্দে তাহাদিগকে দেশব্যাপী বিধ্বস্ত করিয়াছিল। তীব্র ঘৃণা ও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে জেরুযালেম ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছিল এবং হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর ইবাদতখানা ভস্মীভূত হইয়াছিল (এনসাইক, বিব, এর ‘জেরুয়ালেম’ অধ্যায়)। এই আকস্মিক দুর্ঘটনা যখন ঘটিয়াছিল তখনও হযরত ঈসা (আঃ) কাশ্মীরে বসবাস করিতেছিলেন, ইহারও উল্লেখ আছে হযরত মূসা (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীতে (দ্বিতীয়-৩২ঃ১৮-২৬)। বাইবেলে যেখানে প্রথম শাস্তির কথা বর্ণিত হইয়াছে, দ্বিতীয় আযাব সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী উহার পরেই লিপিবদ্ধ রহিয়াছে (দ্বিতীয়-২৮অধ্যায়)। ভবিষ্যদ্বাণীর পরে ইহারও উল্লেখ রহিয়াছে যে, ইহুদীজাতি জেরুযালেমে প্রত্যাবর্তন করিবে (দ্বিতীয়-৩০ঃ১-৫)। ইহাতে প্রমাণিত হইতেছে যে, এই ভবিষ্যদ্বাণী (দ্বিতীয়– ৩২ঃ১৮-২৬) দ্বিতীয় আযাবের প্রতি নির্দেশ করিতেছে, যাহার প্রতি কুরআন মজীদে ইংগিত রহিয়াছে, যথাঃ ‘অবশ্যই তোমরা দেশে দুইবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিবে’ (১৭ঃ৫)। এই আয়াতের মধ্যে মুসলমানগণের জন্য সতর্কতার সংকেত নিহিত রহিয়াছে যে, ইহুদীদের মত তাহারাও দুইবার শাস্তি প্রাপ্ত হইবে যদি তাহারা অসৎ পথ পরিত্যাগ না করে। কিন্তু সময়ের সংকেত হইতে তাহারা শিক্ষা গ্রহণ করে নাই এবং অসদাচরণ হইতে বিরত না হওয়ার দরুন তাহারা প্রথম আযাবে পতিত হইয়াছিল ১২৫৮ খৃষ্টাব্দে যখন বাগদাদের পতন ঘটিয়াছিল। হালাকু খাঁর বর্বর তাতার যাযাবরদল মুসলমানদের ক্ষমতা ও জ্ঞানের কেন্দ্রস্থল বাগদাদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দিয়াছিল এবং ১৮ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করিয়াছিল। যাহা হউক এই ভয়াবহ বিপর্যয় হইতে ইসলাম বিজয়ী রূপে প্রকাশ লাভ করিয়াছিল যখন বিজয়ীগণ কালক্রমে হইল পরাজিত। হালাকুর পৌত্র (গজন খান) মোগল ও তাতার বাহিনীর এক বিরাট দলসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় আযাব আখেরী যমানাতে তাহাদের জন্য নির্ধারিত ছিল।