পূর্ববর্তী কয়েকটি আয়াতে এই বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইয়াছে যে, পিতা ইব্রাহীম (আঃ) ঐশী-পরিকল্পনা অনুযায়ী তাহার স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈলকে মক্কার তরুলতাহীন অনুর্বর প্রান্তরে বসবাসের জন্যে রাখিয়া আসিয়াছিলেন। ইসমাঈল একটু বড় হইয়া উঠিলে, ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রের সহযোগিতায় কা’বাগৃহটি পুনর্নির্মাণ করেন। পুনর্নির্মাণকালে তিনি আল্লাহ্তা’লার কাছে সকাতরে প্রার্থনা করিয়াছিলেন, আল্লাহ্তা’লা যেন আরব জাতির মধ্যে এমন এক মহান নবীর অভু্যদয় ঘটান যিনি সকল মানুষের সবসময়ের পথ প্রদর্শক ও নেতা হইবেন। যখন সময় আসিল এবং সেই প্রতিশ্রুত মহানবীর (সাঃ) অভ্যুদয় ঘটিল, এবং আল্লাহ্তা’লার স্থায়ী পরিকল্পনা কার্যকরী হইল, তখন কা’বাকে বিশ্বমানবের কিবলায় পরিণত করা হইল। কিন্তু নবী করীম (সাঃ) যতদিন পর্যন্ত মক্কায় ছিলেন, ততদিন তিনি পুরাকালীন রীতি ও ঐশী নির্দেশ মোতাবেক বনী ইসরাইলী নবীগণের ‘কিব্লা’ ‘জেরুজালেমের মসজিদ’ এর দিকে মুখ করিয়া নামায আদায় করিতেন। মদীনাতে গিয়াও তিনি নামাযের সময় ঐ কিবলার দিকেই মুখ করিতে থাকেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে তিনি আল্লাহ্ কর্তৃক কা’বার দিকে মুখ ফিরাইয়া নামায পড়িতে আদিষ্ট হইলেন। ইহাতে ইহুদীরা আপত্তি উত্থাপন করিল। এই আয়াতে তাহাদের আপত্তির জবাব দেওয়া হইয়াছে এবং কিব্লা-পরিবর্তন সম্পর্কিত ঐশী নির্দেশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের উপর কিছু আলোকপাত করা হইয়াছে। কুরআন হঠাৎ করিয়া কোন নূতন আদেশ-নির্দেশ জারী করে না। নূতন আদেশকে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী করিয়া তুলিবার জন্য কুরআন বিনাব্যতিক্রমে সর্বপ্রথমে ইহার যৌক্তিকতা বুঝাইয়া দেয় এবং যতরকমের আপত্তি উঠিতে পারে তাহা আঁচ করিয়া পূর্বাহ্নেই সেগুলি খণ্ডনের প্রয়াস পায়। যেহেতু, কিব্লা পরিবর্তনের আদেশ কিছু লোকের মানসিক ভারসাম্যে কিছুটা চঞ্চলতা সৃষ্টি করিতে পারে, সেই হেতু এই আয়াতে পটভূমি সৃষ্টি কল্পে একটি সাধারণ মন্তব্য রাখা হইয়াছে যে, উপাসনার উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট দিক ঠিক করার মাঝে তেমন গুরুত্ব কিছু নাই, কেননা সব দিকই আল্লাহ্র। আসলে যাহা প্রয়োজনীয় তাহা হইল আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধতা। “পূর্ব ও পশ্চিমের মালিকতো আল্লাহ্তা’লাই” এই বাক্যের তাৎপর্য ইহাই যে, পূর্বদিক নির্বাচন করা বা পশ্চিম দিক নির্বাচন করার মাঝে বিশেষ গুরুত্ব নাই, কারণ যে আল্লাহ্র কাছে উপাসনা নিবেদন করা হয়, তিনিতো সর্বত্রই বিরাজমান। তবে হ্যা, ইহার একটা গুরুত্ব নিশ্চয় আছে, আর তাহা এই যে, বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐক্যবোধ গড়িয়া তোলা। এই ঐক্য ও একাত্মতার জন্য একমুখী হওয়ার প্রয়োজন। এই আয়াতে পরোক্ষ ইঙ্গিত রহিয়াছে যে ‘কাবা’ মুসলমানদের অধিকারে আসবে।