কাফেরদিগের অভিযোগ অনুযায়ী লোক পরস্পরাগত প্রবাদলিপিতে বিভিন্ন লোকের নাম উল্লেখ রহিয়াছে, যাহারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কুরআন রচনায় সাহায্য করিত– যেমন, জাবার নামক এক খৃষ্টান কৃতদাস, আইশ বা ইয়াইশ, আল হুয়াইতিব ইবনে আব্দুল উয্যা-এর এক চাকর এবং আবু ফুকাইহ, যে ইয়াসার ও আদাস বা আদ্দাস নামে পরিচিত ছিল, অউয বিন রাবীর এক কৃতদাস [মায়ানি ও ফাতহ্]। আম্মর,সুহাইব, সালমান, আবদুল্লাহ্ বিন সালাম এবং নেষ্টুরিয়ান সন্ন্যাসী সেরজিয়াসের নামও এই সম্পর্কে উল্লেখিত রহিয়াছে। প্রকৃতপক্ষে এখানে কুরআন অবিশ্বাসীগণের দুইটি আপত্তির বিষয়ে ইঙ্গিত করিয়াছে— একটি হইল কিছু সংখ্যক নবদীক্ষিত কৃতদাসের সম্বন্ধে যাহাদের নিকট হইতে নবী করীম (সাঃ) কুরআন প্রণয়নে সাহায্য গ্রহণ করিতেন বলিয়া অভিযোগ করা হয়, যাহা ২৫ঃ৫-৭ আয়াতেও উল্লেখিত হইয়াছে এবং অপর অভিযোগটি হইতেছে ইসলামে নবদীক্ষিত জনৈক খৃষ্টান কৃতদাসের নিকট হইতে আঁ-হুযুর (সাঃ) বাইবেল শুনিয়াছিলেন এবং উহারই অংশ বিশেষ কুরআনে অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছিল বলিয়া উত্থাপিত আপত্তিরই প্রতি এই আয়াত ইংগিত করিতেছে। এখন দ্বিতীয় আপত্তি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট খৃষ্টান ক্রীতদাসগণ কি বাইবেলের আরবী অনুবাদ পড়িয়াছিলেন, না গ্রীক অথবা হীব্রু অনুবাদ? তিনি আরবী বাইবেল পাঠ করিলে তাহা হইলে প্রমাণ করিতে হইবে যে, মহানবী (সঃ)-এর যমানায় বাইবেল আরবী ভাষায় অনুবাদ করা হইয়াছিল এবং উহা এত সাধারণ্যে প্রচলিত ছিল যে, এমনকি কৃতদাসেরাও দোকান-খামারে কাজ করার সময়ে উহা পাঠ করিত। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময় পর্যন্ত কোন ভাষাতেই বাইবেলের অনুবাদ করা হয় নাই। এমন কি মদীনার ইহুদী গোত্রগুলি তখন পর্যন্ত তাহাদের তওরাতের অনুবাদও আরবী ভাষায় করিতে পারে নাই এবং যখনই নবী করীম (সাঃ) এই কিতাবের প্রয়োজন মনে করিতেন, তখন তিনি বিখ্যাত হিব্রু ভাষাবিদ পণ্ডিত আবদুল্লা বিন সালামের সঙ্গে পরামর্শ করিতেন। ডক্টর আলেকজাণ্ডার সোটার এম, এ, এল, এল, ডি তাহার রচিত “দি টেস্ট এণ্ড ক্যানন অব দি নিউ টেষ্টামেন্ট” (২য় সংস্করণ- ১৯২৫,পৃঃ ৭৪)পুস্তকের আরবী অনুবাদ শিরোনামের অধ্যায়ে লিখিয়াছেন, সর্বপ্রাচীন পাণ্ডুলিপিও অষ্টম শতাব্দীর পূর্বেকার নহে। আরবী ভাষায় দুইটি তরজমা স্ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ায় করা হইয়াছিল বলিয়া জানা যায়। এবং যদি রসুল করীম (সাঃ)-কে নবদীক্ষিত থুষ্টান কৃতদাস হিব্রু কিম্বা গ্রীক বাইবেল পড়িয়া শুনাইতেন, তাহা হইলে ঐ পুস্তক শ্রবণে তাঁহার কি উপকারে আসিত যাহার কিছুই তিনি বুঝিতেন না এবং ঐ কল্পিত লোকটি (যাহার সাহায্যে তিনি (সাঃ) কুরআন সংকলন করিতেন বলিয়া আপত্তি তিনি একজন আজামী (ক্রুটিপূর্ণ উচ্চারণকারী বিদেশী ব্যক্তি) হইয়া আরবী ভাষায় (ত্রুটিপূর্ণ জ্ঞান দ্বারা) কুরআন মজীদে সন্নিবিষ্ট মহান ও চিরন্তন সত্যসমূহ কিরূপে রসূল করীম (সাঃ)-কে ব্যাখ্যা করিয়া বুঝাইতে পারিতেন, যদিও এই ধরণের তত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা করার জন্য আরবী ভাষায় প্রগাঢ় ও সুগভীর জ্ঞান অত্যাবশ্যক। (দি লারজার এডিশন অব দি কমেন্টারী দ্রষ্টব্য)