প্রত্যেক যুগেই কোন ব্যক্তি বা জাতি নিজস্ব উচ্চতর বুদ্ধিমত্তা ও কঠোর পরিশ্রম দ্বারা অন্য ব্যক্তি বা জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রভুত্ব অর্জন করে এবং শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করে। ইহা অসম্মানজনক এবং অন্যায় বা অনুচিতও নহে—যে পর্যন্ত না ইহা কম ভাগ্যবান লোকদিগকে তাহাদের নিজ জ্ঞানবুদ্ধির সদ্ব্যবহার করিয়া জীবনের ভাল দিক ও শ্রেষ্ঠ বস্তু অর্জন করার জন্য উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা হইতে বঞ্চিত না করে কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা সর্বদাই দরিদ্রদের নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা এবং ধনশালীদের ক্ষমতা ও সুবিধাসমূহে ভাগ বসানোর সকল প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে মুখ-ব্যাদান করিয়া বসে। ক্ষমতার অধিকারী সুবিধাভোগী লোকদের অত্যাচার হইতে জগতের রক্ষাকল্পে এবং উৎকর্ষতার প্রকৃত গুণাবলী ও বুদ্ধিমত্তার উন্নতির পথ উন্মুক্ত করিয়া মানবজাতির মধ্যে সাম্য এবং ন্যায় পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য করুণাময় আল্লাহ্তা’লা সংস্কারক আবির্ভূত করিয়া থাকেন। তাহাদের আবির্ভাব নবযুগের ঘোষণা করে এবং বঞ্চিত ও দরিদ্র লোকদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। সংক্ষেপে অথচ অত্যন্ত সুন্দরভাবে এই আয়াত ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পর্কে ইসলামী আইনের উপস্থাপন করিয়াছে। ‘রিয্কিহিম’ অর্থাৎ ‘তাহাদের ধন-সম্পদ’ শব্দগুলির মধ্যে ‘তাহাদের’ শব্দটির উপর গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে ইসলাম ব্যক্তি-মালিকানা স্বীকার করিয়াছে। অন্যদিকে “তাহাদের রিয্ক” বাক্য দ্বারা সকল বস্তুতে সকল মানুষের যৌথ বা এজমালি মালিকানা নির্দেশ করিতেছে– কারণ, কোন বস্তু কেবল তখনই কোন ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা হয় যাহাতে তাহার স্বত্ব রহিয়াছে। বস্তুতঃপক্ষে পবিত্র কুরআন সকল বস্তুর উপরে দ্বৈত মালিকানার নীতি স্বীকার করিয়াছে— যেমন মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া পরিশ্রম দ্বারা লব্ধ সম্পত্তির উপার্জনকারী ব্যক্তির মালিকানা-স্বত্বের অধিকার স্বীকার করা এবং একই সঙ্গে সেই সম্পত্তিতে সকল মানবের অধিকার স্বীকার করা। ইসলাম প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি মালিকানায় অবাধ বা লাগামহীন অধিকারে যেমন বিশ্বাস করে না, তেমনি সম্পদ এবং ইহার উৎপাদনের উপায়-উপকরণের উপরও রাষ্ট্র কর্তৃক খোলাখুলিভাবে সম্পূর্ণ দখলের অধিকার স্বীকার করে না। ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়।