১৪৮২

এই আয়াতে কুরআন করীমকে অক্ষতরূপে সংরক্ষণ করার যে প্রতিশ্রুতি আছে তাহা এমন সুস্পষ্টরূপে পরিপূর্ণতা লাভ করিয়াছে যে, অন্য কোন প্রমাণ যদি নাও থাকিত, তবু এই সত্যই ইহার (কুরআনের) ইলাহী উৎস প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হইত। এই সুরা মক্কাতে নাযেল হইয়াছিল এমন এক সময়ে, যখন আঁ-হযরত (সাঃ) এবং তাঁহার সাহাবাগণের (রাঃ) জীবন চরম বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে ছিল এবং শত্রুপক্ষ নূতন ধর্মমতকে সহজেই নিষ্পেষণ করিয়া সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করিয়া দিতে পারিত (Noldeke)। এইরূপ এক অবস্থার মধ্যে কাফেরদিগকে তাহাদের চরম অপচেষ্টা দ্বারা ইহাকে ধ্বংস করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহ্বান জানানো হইয়াছিল এবং এই সাথে তাহাদিগকে সাবধানও করিয়া দেওয়া হইয়াছিল যে, তাহাদের সকল ষড়যন্ত্র আল্লাহ্‌তা’লা ব্যর্থ করিয়া দিবেন, কারণ তিনি স্বয়ং ইহার হেফাযতকারী। এই দাবী ছিল দ্ব্যর্থহীন ও খোলাখুলি এবং শত্রুপক্ষ ছিল শক্তিশালী ও নির্মম; তথাপি কুরআন যাবতীয় বিকৃতি, প্রক্ষেপণ ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নিরাপদ থাকিয়া অব্যাহতভাবে স্বীয় নিরাপত্তার বিজয় ঘোষণা করিয়া চলিয়াছে। কুরআনের বিদ্বেষ-পরায়ণ সমালোচক স্যার উইলিয়াম মুইর বলিয়াছেন, ‘আমরা খুব জোরের সঙ্গেই বলিতে পারি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক রচিত(?) কুরআনের প্রতিটি বাক্যই অপরিবর্তীত, অবিকৃত এবং অকৃত্রিম রহিয়াছে। … অন্যান্য প্রত্যেক প্রকারের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সংরক্ষিত মূল গ্রন্থ যাহা আমাদের নিকট রহিয়াছে উহাই মুহাম্মদ (সাঃ) স্বয়ং প্রণয়ন করিয়াছিলেন (?) এবং প্রচার করিতেন … তাহাদের গ্রন্থের অবিমিশ্র মূল রচনার সহিত আমাদের ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন পাঠের তুলনা করা আর বৈসাদৃশ্যপূর্ণ বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে তুলনা করা একই কথা” (Introduction to the life of Mohammed)। জার্মানের খ্যাতনামা প্রাচ্য ভাষাবিদ অধ্যাপক নোলডিকি লিখিয়াছেনঃ ‘কুরআনের মধ্যে পরবর্তীকালে প্রক্ষেপের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে’ (এনসাইক ব্রিট)। বেশ কয়েক বৎসর পূর্বে, কুরআনের মূল-পাঠের পবিত্রতার মধ্যে ডাঃ মিন্‌গানা কর্তৃক ত্রুটি আবিষ্কারের চেষ্টার চরম ব্যর্থতা কুরআনের দাবীর সত্যতাকে মোহরাঙ্কিত করিয়া দিয়াছে যে, নাযেলকৃত সকল ধর্মগ্রন্থের মধ্যে একমাত্র পবিত্র কুরআনই সব রকম প্রক্ষেপ হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত রহিয়াছে। (দি লারজার এডিশন অব দি কমেন্টারী, ১২৬৩-৬৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।