১৩৫১

হিন্দু ধর্ম মতে স্বর্গ এবং নরক (পুরস্কার এবং শাস্তি) উভয়ই সীমাবদ্ধ কালের জন্য, মানুষকে তাঁহার কর্মফল স্বরূপ শাস্তি বা পুরস্কার ভোগ করার পর পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করিতে হয়। সেমেটিক ধর্মগুলির মধ্যে ইহুদী ধর্মমতে অ-ইহুদীগণ বেহেশ্‌তে যাইবে না এবং ইহুদীগণকে দোযখের আযাব অল্প কিছু দিন ব্যতিরেকে ভোগ করিতে হইবে না। খৃষ্টধর্মের মতে বেহেশত ও দোযখ উভয়ই চিরস্থায়ী, যদিও তাহাদের ফেরকা বিশেষ এই বিশ্বাস রাখে যে, শেষ পর্যন্ত স্বর্গ একদিন নিঃশেষ হইয়া যাইবে (তফসীরে কবীর)। ইসলাম এই সকল ধর্মমতের বিরুদ্ধে মৌলিকভাবে দ্বিমত পোষণ করে। ইসলাম ধর্মের মতে জান্নাত বা বেহেশ্‌ত চিরস্থায়ী এবং জাহান্নাম বা দোযখ ক্ষণস্থায়ী এবং সীমিত কালের জন্য হইবে। ইমাম আহমদ বিন-হাম্বল (রহঃ) বলিয়াছেন যে, আবদুল্লাহ বিন আমর-বিন-আল্‌-আস (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, হযরত রসূল করীম (সাঃ) ফরমাইয়াছেনঃ জাহান্নামের উপর এমন এক সময় আসিবে যখন উহার দরজাগুলি বাতাসে খট্ খটাইতে থাকিবে এবং উহার মধ্যে কোন লোক অবশিষ্ট থাকবে না। উহার নিবাসীগণ উহাতে বহু শতাব্দী থাকিবার পর এইরূপ ঘটবে (মুসনাদ)। এই হাদীস অনুযায়ী জাহান্নাম সম্বন্ধে ‘খালেদীনা’ (স্থায়ী) শব্দ শত শত বৎসর ব্যাপিয়া অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। হযরত আবদুল্লাহ্‌ বিন উমর, হযরত জাবির (রাঃ) ও ইমাম হাম্বল (রহঃ) ও একমত প্রকাশ করিয়াছেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতেও এক ও অভিন্ন হাদীস বর্ণিত হইয়াছে (বুখারী)। বিখ্যাত ধর্মীয় ওলামায়ে কেরামগণের মধ্যে ইব্‌নে তাঈমিয়া এবং ইব্‌নে কাইয়েম লিখিয়াছেনঃ যদিও দুষ্ট প্রকৃতি বিশিষ্ট অবিশ্বাসীদের চিরকাল জাহান্নামে থাকা উচিত, কিন্তু একদিন আল্লাহ্‌র অসীম করুণাবলে দোযখই অস্তিত্ব হীন হইয়া যাইবে, এবং যখন জাহান্নামই থাকিবে না তখন উহার নিবাসীও থাকিবে না (ফাতহ্)। কুরআন শরীফে বেহেশ্‌ত সম্বন্ধে ‘পুরস্কার যাহা কখনও শেষ হইবে না’ বাক্য ব্যবহৃত হইয়াছে (৪১ঃ৯৮৪ঃ২৬, ৯৫৭),কিন্তু দোযখ সম্পর্কে এই ধরণের কোন শব্দাবলী ব্যবহৃত হয় নাই। অধিকন্তু ১০১ঃ১০-১২ আয়াত সমূহে জাহান্নামকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা হইয়াছে। মাতৃগর্ভে ভ্রুণ যেমন অবিকশিত থাকে (যেই পর্যন্ত না গর্ভস্থ শিশুর দেহ গঠিত হয় এবং ইহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পূর্ণতা লাভ করে, একই রূপে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতভাগ্য লোকেরা সেখানে থাকিবে যে পর্যন্ত না তাহাদের বৃত্তিগুলি পূর্ণ বিকশিত হইয়া প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎকার এবং দর্শনে সক্ষম হয়।