১২৯

হারূত ও মারূত দুইটি নামই গুণবাচক নাম। প্রথম শব্দটি ‘হারাত’ ক্রিয়া হইতে উৎপন্ন, যার অর্থ সে ছিড়িয়া ফেলিল। ‘মারূত’ শব্দটি মারাতা হইতে উৎপন্ন যার অর্থ, সে ভাঙ্গিয়া ফেলিল। অতএব, শব্দ দুইটির অর্থ, যে ছিড়িয়া ফেলে ও যে ভাঙ্গিয়া ফেলে। নামগুলির তাৎপর্য এই যে,ঐ দুইজনের অবির্ভাব দ্বারা এই কথা বুঝাইতেছে যে, বনী ইসরাঈল জাতির শত্রুদের ক্ষমতা ও সাম্রাজ্য ছিন্ন ভিন্ন ও ভাঙ্গিয়া খণ্ডবিখণ্ড হইয়া যাইবে। এই পবিত্র লোকেরা (১৩০তম টিকা দ্রষ্টব্য) নব দীক্ষিতগণকে দীক্ষাদানের সময় বলিলেন যে, তাহারা আল্লাহ্‌র তরফ হইতে এক ধরণের পরীক্ষা-স্বরূপ আসিয়াছেন, যাহাতে মানুষ সৎ ও অসতের এবং ভাল ও মন্দের পার্থক্য শিখিতে পারে। সেই সমাজের সদস্য পদ কেবল পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই আয়াতে বলা হইতেছে যে, মহানবী (সাঃ)-এর সময়েও ইহুদীরা ঐ একই ধরণের হীন কলাকৌশল ও দুষ্কর্মে রত ছিল, যেরূপ হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর রাজত্ব কালে তাহাদের পিতৃপুরুষগণও অবলম্বন করিয়াছিল। এই আয়াত ইহাও বলিয়া দিতেছে যে, তখনকার দুষ্কৃতকারীরা ঐ সব বিদ্রোহী লোক ছিল যাহারা সুলায়মান (আঃ)-কে ভণ্ড ও অবিশ্বাসী আখ্যা দিয়াছিল। তাই এই আয়াত, সুলায়মান (আঃ) কে এই অপবাদ হইতে মুক্ত করিতেছে এবং আরো ব্যক্ত করিতেছে যে, দুস্কৃতকারীরা তাহাদের সঙ্গী সাথীদের জন্য এমন সব চিহ্ন ব্যবহার করিত, যাহা সাধারণ লোকের কাছে এক অর্থ বহন করিত এবং নিজেদের কাছে ভিন্ন অর্থ বহন করিত। এইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তাহারা সাধারণ মানুষের কাছ হইতে তাহাদের মনের আসল অভিসন্ধি গোপন রাখিত। সুলায়মান (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাকানো গোপন ষড়যন্ত্রের প্রতি এই আয়াত দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক বলিতেছে যে, তাহারা তাঁহার সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করিতে চাহিয়াছিলে এবং ইহা দ্বারা ইঙ্গিত করিতেছে যে, মদীনার ইহুদীরা এখন ঐ একই ধরণের হীন পন্থায় মহা নবী (সাঃ)-এর বিরোধীতা ও ষড়যন্ত্র করিতেছে, কিন্তু তাহারা কখনও তাহাদের এই জঘন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করিতে পারিবে না।