১২

‘আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত বা উপাসনা করি’ কথাটি, ‘একমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ বাক্যটির পূর্বে স্থান পাইয়াছে। কেননা, আল্লাহ্‌তা’লার মহান গুণাবলী অবগত হইবার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে প্রথম যে আবেগট জাগিয়া উঠে, তাহা হইল, আরাধনার আবেগ, এই প্রথম আবেগের পরে পরেই, সাহায্য প্রার্থনার আবেগ জাগে মনে। মানুষ আল্লাহ্‌র উপাসনা করিতে চায়, কিন্তু তাহা করিতে গেলে, নানাভাবেই আল্লাহ্‌র সাহায্যের প্রয়োজন। এই আয়াতে ‘আমরা’ (বহুবচন) ব্যবহৃত হইয়াছে। ইহা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে, (ক) মানুষ পৃথিবীতে একাকী বাস করে না বরং সে সমাজের অংশ হিসাবেই পরিস্থিতি ও পরিবেশের সহিত মিলিয়া মিশিয়া বাস করে, অতএব তাহার একা একা আল্লাহ্‌র পথে চলিলেই হইবে না, বরং অন্যদেরকে সঙ্গে লইয়া চলিতে হইবে, (খ) যে পর্যন্ত মানুষের পারিপার্শ্বিকতা শুধরানো না হয়, সে পর্যন্ত মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে না।

এইখানে একটি বিশেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় রহিয়াছে। প্রথম চারটি আয়াতে আল্লাহ্‌কে প্রথম পুরুষ (ব্যাকরণগতভাবে) দেখানো হইয়াছে। কিন্তু পঞ্চম আয়াতে আসিয়া হঠাৎ তাঁহাকে মধ্যম পুরুষে আহ্বান করা হইয়াছে। তাহার কারণ এই যে, প্রথম চারটি আয়াতে যে চারটি মহান ঐশী গুণের উল্লেখ হইয়াছে, সেগুলির ধ্যান-ধারণা ও প্রভাব মনে প্রবেশ করা মাত্র, মানুষের হৃদয় সেই মহামহিম স্রষ্টার দর্শন লাভের জন্য এত তীব্রভাবে ব্যাকুল ও উদ্বেলিত হইয়া উঠে এবং তাঁহার উপাসনার বাসনা এতই অপ্রতিরোধ্য হইয়া পড়ে যে, তাহার হৃদয়ের সেই আকুতিকে চরিতার্থ করার উচ্ছাসে ও ব্যগ্রতায় এখানে এই পঞ্চম আয়াতে আসিয়া, মনের অগোচরেই, প্রথম পুরুষ (Third Person) মধ্যম পুরুষে রূপান্তরিত হইয়া যায়।