১১৭৫

“আইয়াদীন” এখানে আলঙ্কারিক অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছেঃ (১) স্বেচ্ছায় এবং মুসলমানগণের উচ্চতর ক্ষমতার স্বীকৃতি স্বরূপ, (২) নগদ অর্থে, পরে কিংবা কিস্তিতে পরিশোধ নহে, (৩) মুসলমানগণের অনুগ্রহরূপে বিবেচনা করিয়া ‘আন’ অর্থ, কারণ এবং ‘ইয়াদ’ অর্থ ক্ষমতা ও অনুগ্রহ (লেইন)। এই আয়াত আহলে কিতাবদের মধ্যে যাহারা আরবে বসবাস করিত তাহাদিগকে বুঝায়। এই সব লোকেরাও পৌত্তলিকদিগের মত ইসলামের বিরুদ্ধাচরণে সক্রিয় ছিল এবং এবং ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করিয়া দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। অতএব, মুসলমানগণ আদিষ্ট হইয়া ছিল এইসকল লোকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য, যতক্ষণ না তাহারা আনুগত্যের সহিত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করিতে রাজি হয়। মুসলিম রাষ্ট্রের অধীনে এই সকল অ-মুসলিমরা স্বাধীন নাগরিক হিসাবে যে নিরাপত্তা ভোগ করিত উহার বিনিময়ে যে কর তাহাদের উপরে ধার্য করা হইত উহাকে ‘জিযিয়া’ বলা হইত। উল্লেখ্য যে, অমুসলমানগণের উপরে নির্ধারিত ‘জিযিয়া’র বিপরীত মুসলমানগণের উপরে যাকাতরূপে অনেক বেশী কর ধার্য ছিল, তদুপরি তাহাদিগকে দেশরক্ষার কাজে সেনাবাহিনীতে কাজ করিতে হইত, কিন্তু অমুসলিমদিগকে দেশরক্ষার দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি দেওয়া হইত। এমতাবস্থায় তাহারা মুসলমানদের তুলনায় অনেক আরামে ছিল, কারণ তাহাদিগকে লঘু কর দিতে হইত এবং সামরিক কর্তব্য হইতেও তাহারা নিস্তার পাইত। “সাগিরুন” শব্দ অধীনস্থ রাজনৈতিক অবস্থা বুঝায়, অন্যথায় তাহারা মুসলমানদের সাথে সমান সামাজিক অধিকার ভোগ করিত। আরবের পৌত্তলিকরা এবং প্রতিবেশী ইহুদী ও খৃষ্টানগণ ইসলামের প্রধান শত্রু ছিল। পৌত্তলিকদিগের সঙ্গে অবিশ্বাসীগণের সম্পর্ক বর্ণনা করার পর এই সূরা তফসীরাধীন আয়াত দ্বারা আহলে কিতাবের সঙ্গে মুসলমানগণের সম্পর্ক বর্ণনা করিতেছে, বিশেষভাবে তাহাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদের ক্ষেত্রে।