‘সাবী’ তাহাকে বলা হয় যিনি নিজ ধর্ম ত্যাগ পূর্বক নূতন ধর্ম অবলম্বন করেন। বস্তুতঃ আরব দেশের ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলির কোন কোন অংশে কয়েকটি ধর্মীয় গোত্র বসবাস করিত, তাহাদিগকে ‘সাবিয়ুন’ বলা হইত। তাহারা ছিল (১) মেসোপটেমিয়াতে বসবাস কারী তারকা-উপাসক গোষ্ঠি (গিবনের ‘রোমান ইম্পায়ার’ ‘মুরূজুদ্ দাহাব’ এবং এনসাইক্লো রিল-এথিক্স ৮ম-এর ম্যানডিয়ান্স); (২) ইরাক ভূখণ্ডের মসুলে বসবাসকারী এক জাতি, যাহারা এক খোদায় বিশ্বাসী ছিল, নবীগণকেও মানিত কিন্তু তাহাদের কোন ধর্মপুস্তক ছিল না। তাহারা দাবী করিত, তাহারা হযরত নূহ (আঃ)-এর ধর্মাবলম্বী (জরীর ও কাসীর)। তবে উপরোক্তদের সাথে বাইবেলের ব্যাখ্যাকারদের ইয়ামেন বাসী সাবিয়ানদের কোন সম্পর্ক নাই।
এই আয়াতের তাৎপর্য এই নয় যে, আল্লাহ্ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করিলেই পরিত্রাণের জন্য যথেষ্ট হইবে। ভ্রমবশতঃ কেহ কেহ এইরূপ মনে করিয়া থাকেন। কুরআন অত্যন্ত জোরের সহিত ঘোষণা করে, রসূলে করীম (সাঃ)-এর উপর বিশ্বাস আনয়ন একান্ত অপরিহার্য (৪ঃ১৫১-১৫২, ৬ঃ৯৩)। মহানবীর (সাঃ) উপর বিশ্বাস আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণাঙ্গ ও সার্বিক বিশ্বাসের একটি অঙ্গ এবং পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপনের সহিত ওহী-এলহামের প্রতি বিশ্বাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত (৪ঃ১৫১,১৫২ এবং ৬ঃ৯৩)। অন্যত্র দেখা যায়, কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিতেছে, ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যাহা আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্য (৩ঃ২০,৮৬)। এই আয়াত আল্লাহ্ ও আখেরাতে বিশ্বাস স্থাপনের কথা উল্লেখ করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছে, কেননা আল্লাহ্ ও আখেরাতে বিশ্বাসের মধ্যেই রসূলে পাক (সাঃ)- এর প্রতি বিশ্বাস ও ওহী-এলহামের প্রতি বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত হইয়া রহিয়াছে; এই জন্য নহে যে, শেষোক্ত বিশ্বাস দুইটি পরিহারযোগ্য। মোট কথা, চারিটি ব্যাপারে অবিভাজ্য বিশ্বাস রাখাই পুরামাত্রায় প্রয়োজন। আসল কথা হইল এই যে, ইহুদীরা দাবী করে তাহারাই আল্লাহ্র অনুগৃহীত জাতি এবং কেবল মাত্র তাহারাই আল্লাহ্র কাছে পরিত্রাণযোগ্য, অন্যেরা পরিত্রাণযোগ্য নহে। তাহাদের ঐ ভ্রান্তিপূর্ণ বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করিবার জন্য আল্লাহ্তা’লা এই আয়াত নাযেল করিয়াছেন। এই আয়াতের আরেকটি তাৎপর্য আছে। ইহা বলিয়া দিতে চায় যে, বাহ্যিক ভাবে ইহুদী, খৃষ্টান, সাবিয়ান, এমনকি মুসলমানই হউক না কেন, যদি বিশ্বাসটা কেবল ব্যক্তির ঠোটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহা হইলে ইহা কোন কাজে আসে না। বিশ্বাসের মধ্যে যদি কোন চালিকাশক্তি ও কর্মপ্রেরণা না থাকে, তাহা হইলে ইহা জীবন্ত নহে, বরং মৃত। এই আয়াতে একটি ভবিষ্যদ্বাণী রহিয়াছে এবং ইসলামের সত্যতার যাচাই করার মাপকাঠি রহিয়াছে। ভবিষ্যদ্বাণীটি হইল, ইসলাম নিশ্চয়ই বিজয়ী ও প্রবল হইবে, কেননা ইহা সত্য ধর্ম। মাপকাঠি হইল এই যে, ভবিষ্যদ্বাণীটি করা হইয়াছিল এমনি একটি সময়ে যখন ইসলাম প্রবল বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় আপন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। এই আয়াতের আরেকটি তাৎপর্য ইহাও হইতে পারে যে, যাহারা নিজেকে বিশ্বাসী বলিয়া দাবী করে, তাহারা ইহুদী, খৃষ্টান, সাবিয়ান বা অন্য যে কোন ধর্মেরই হউক না কেন, যদি আল্লাহ্তে ও আখেরাতে তাহাদের অটল ও অকপট বিশ্বাস থাকে এবং সত্য ধর্মের (ইসলামের) সারবস্তু সৎকর্মশীলতাকে জীবনের অবলম্বন করে তাহা হইলে পরিণামে তাহাদের কোনও ভয়ের কারণ নাই এবং তাহারা দুঃখে নিপতিত হইবে না।